যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করা অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করতে চান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর প্রস্তাবিত অভিবাসন পরিকল্পনা কংগ্রেসে পাস হলে এ দেশে বর্তমানে থাকা ১১ মিলিয়ন অনিবন্ধিত অভিবাসীর জন্য নাগরিকত্বের দরজা খোলার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এই পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবে আশা তৈরি করছে।অবশ্য জো বাইডেন যে প্রস্তাব করেছেন, তা ঠিক সেভাবেই কংগ্রেসে পাস হবে কিনা, হলে কবে হবে, এটাই এখন সবার মূল চিন্তার বিষয়। তবে প্রস্তাবটি পাস হলে অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে গ্রিনকার্ড ও নাগরিকত্ব পাওয়ার দরজা খুলবে। গত তিন বছর ধরে গির্জায় থাকেন জস চিকাস। এল সালভাদর থেকে আসা ক্যালিফোর্নিয়ার এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বয়স এখন ৫৫ বছর। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছর ধরে থাকলেও এখনো সেখানে তিনি অনিবন্ধিত অভিবাসী। গির্জায় নিজের নিরাপত্তার জন্যই প্রার্থনা করেছেন এত দিন। এখন তাঁর প্রার্থনায় স্থান পেয়েছে বাইডেনের পরিকল্পনাটি। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক বড় আশার খবর, তিনি (বাইডেন) আমাদের, আমাদের মতো লাখো পরিবারকে সাহায্য করতে চাইছেন। কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত কী ঘটে, তা দেখতে হবে। আমি এই দেশে ৩৫ বছর ধরে আছি। আমাদের জীবনে আমরা কখনো এমন সুরক্ষার আশ্বাস পাইনি। এটা অনেক বড় ব্যবধান গড়ে দেবে। একটা স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন থাকলে, দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে পারবেন। কোনো দুর্ভাবনা থাকবে না। আর নাগরিকত্ব পেলে তো আপনার একটা স্বতন্ত্র মতই থাকবে। আপনি এই জাতির জন্য নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এমন কিছু পেলে, আমি তাদের কাছে ছুটে যাব, যাদের সাহায্য প্রয়োজন।
কেবল অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে নয় জো বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর রিফিউজি বা উদ্বাস্তুদের চোখেও এখন নতুন স্বপ্ন। নানাভাবে নিজ দেশে যারা নিগৃহিত; তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বপ্ন দেখছে। পাশাপাশি ড্রিমার অর্থ্যাৎ যারা ছোটবেলায় অবৈধভাবে বাবা মায়ের হাত ধরে এদেশে এসেছিলেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথটি সুগম করছেন বাইডেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অভিবাসন বিরোধী। তার উপর করোনা মহামারী একেবারেই অভিবাসন প্রক্রিয়াকে থমকে দিয়েছে। সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে এখন অভিবাসন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে আনার চেষ্টা করছে বর্তমান প্রশাসন। একটু একটু করে একাজে গতি আসতে শুরু করেছে। আগে যারা এদেশে এসে আশ্রয় প্রত্যাশী হতেন, তাদেরকে এক বছরের মধ্যে সেটা করতে হতো। এখন সেই সময় অনেকটা বাড়িয়ে দশ বছর করা হয়েছে।
তবে জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বজুড়ে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে; তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা খুবই সহজ করা হচ্ছে। ফলে দলে দলে সীমান্ত পথে এদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। সীমান্তে চাপ তৈরি হওয়ায় দেশের মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। বিশেষ করে দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে লাখো মানুষ প্রবেশ করছে, এমন খবরই দিচ্ছে গণমাধ্যমগুলো। ফলে অভিবাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসরকে।