প্রবাসে শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন ময়মনসিংহের এক প্রবাসী যুবক। ছয় মাস আগে দেশে ফেরা ওই যু্বককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন তারই বাবা-মা ও ভাই।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় শারফুল ইসলাম ঢালী (৩২) নামের ওই প্রবাসীর হৃদয়বিদারক মৃত্যু আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত বাবা, মা ও ছোট ভাই পলাতক রয়েছেন।

বুধবার সকালে এ ঘটনাটি ঘটেছে পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামে। নিহত শারফুল ইসলাম ঢালী উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রামের ইসহাক ঢালীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শারফুল ইসলাম ঢালী দীর্ঘ ৯ বছর লেবাননে ভালো বেতনে চাকরি করেন। গত ছয় মাস আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। প্রবাসে কর্মরত অবস্থায় আয়-রোজগারের সব টাকা তিনি তার বাবার নামে দেশে পাঠিয়ে দেন।

দেশে ফেরত আসার পর তার বাবা তাকে কোনো টাকা দেবেন না বলে জানান। এমনকি হাত খরচের টাকাও শারফুল ঢালী তার বাবার কাছে চেয়ে পেতেন না। এ নিয়ে বাবা ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো।

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে বাবা ইসহাক ঢালী, মা হোসেনা আরা (৪৭), ছোট ভাই আশরাফুল ঢালী (২৮) লোহার রড ও শাবল দিয়ে শারফুল ঢালীর মাথা, পা ও বুকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এর পর বসতঘরের একটি রুমে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখেন।

শারফুল ঢালীকে মারার সময় তার চাচা-চাচিসহ এলাকাবাসী উদ্ধার করতে গেলে ইসহাক ঢালী, হোসনে আরা, আশরাফুল ঢালী রড, শাবল ও রামদা দিয়ে এলাকাবাসীকে তাড়া দেয়।

দীর্ঘক্ষণ পর তার চাচা ও নুরুল ইসলাম ঢালী স্থানীয় ইউপি (নিগুয়ারি) চেয়ারম্যান শেখ শাহাবুদ্দিনকে ঘটনাটি জানান।

ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে শারফুল ঢালীকে তাদের বাড়ি থেকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শারফুল ঢালী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

নিহতের চাচা নূরুল ইসলাম ঢালী জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা নিয়ে ছেলে শারফুল ঢালীর সঙ্গে তার বাবা ও মায়ের প্রায়ই ঝগড়া হতো।

বুধবার সকালে ঝগড়ার একপর্যায়ে তার ভাই ইসহাক ঢালী, ভাবি হোসনে আরা ও ভাতিজা আশরাফুল ঢালী লোহার রড, শাবল দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ভাতিজা শারফুলকে গুরুতর জখম করে। এর পর একটি রুমে ফেলে রেখে তালা মেরে রাখে।

নিগুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন শেখ জানান, নিহত শারফুল সহজ-সরল ছিল। বিদেশে থাকাবস্থায় সব টাকা তার বাবা ও মা কাছে পাঠাত। বাবা ও মা খারাপ প্রকৃতির লোক ছিল। টাকার হিসাব চাওয়ার কারণে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

পাগলা থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।