জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটি অর্থাৎ মিরপুর টেস্ট দিয়ে অবসর নিতে চান তিনি। এছাড়া শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বলেও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আগের সেই ফর্ম নেই, মাঠের বাইরেও একের পর এক বিতর্কে নাস্তানাবুদ সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে ভারতে টেস্ট সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সাকিবের নামে দেশে হয়েছে হত্যা মামলা। সব মিলিয়ে যেন নিজের শেষ দেখতে পাচ্ছিলেন এক সময়ের তিন ফরম্যাটের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সাদা পোশাকেও ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাকিব। সুযোগ পেলে দেশের মাটিতেই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজকেই নিজের বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে পছন্দ সাকিবের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’
‘এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।’-যোগ করেন সাকিব।
এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও শঙ্কায় সাকিব। যে কারণে দেশে ফেরার আগে ভাবতে হচ্ছে তাকে। এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘এভাবেই ফারুক (বিসিবি সভাপতি) ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।’
টেস্ট ও টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও ওয়ানডেতে খেলা চালিয়ে যাবেন সাকিব। গুঞ্জন আছে, আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে তিন ফরম্যাট থেকেই অবসরে যাবেন সাকিব। তার আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র ওয়ানডেতে দেখা যাবে এই অলরাউন্ডারকে। তবে নিয়মিত তাকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকছে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবেন সাকিব। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও দেখা যাবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সাকিব আল হাসানের শেষ ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে গোল্ডেন ডাক খেয়েছিলেন তিনি। আর বল হাতে ১৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
সাকিবের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। ব্যাট হাতে ২৬ রান আর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন সাকিব। দেশের ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই ছিলেন তিনি। এরপর প্রতিনিধিত্ব করেছেন টানা নয় বিশ্বকাপে।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের জার্সিতে ১২৯টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। যেখানে ১২৭ ইনিংসে ব্যাট করে প্রায় ২৩ গড়ে করেছেন ২৫৫১ রান। যেখানে তিনি ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১২১ গড়ে। তার নামের পাশে আছে ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি। তাছাড়া বল হাতে শিকার করেছেন ১৪৯ উইকেট।