ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলোতে নির্বাচন ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত রেখেছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে আপিলের শুনানি শেষে এ সংক্রান্ত আদেশ আসে। আর তাতে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল ৯ সেপ্টেম্বরেই হবে ভোটগ্রহণ, আর কোনও আইনি বাধা রইলো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ইতিপূর্বে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রেখে গতকাল (বুধবার) দুপুরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া। এসএম ফরহাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী।
এর আগে গতকাল সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি শুরু হয়। টানা দুই ঘণ্টার মতো শুনানি শেষে আদেশ ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। এই বিষয়ে শুনানি শেষে গত ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচনের সব কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। এসএম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণাদি ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে বলেন। বিচারপতি হাবিবুল গণি এবং বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ৪৫ মিনিট পরই ওইদিন হাইকোর্টের আদেশ একদিনের জন্য স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরের হাতে লেখা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে চেম্বার জাস্টিস ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর কোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ আরো একদিন বাড়িয়ে দেন আদালত।
গতকাল আপিল বিভাগ চেম্বার কোর্টের স্থগিতাদেশ ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন। ফলে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতই থাকছে। এর মধ্য দিয়ে আসন্ন ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনগত কোনো বাধা থাকলো না।
এদিকে ডাকসু নির্বাচন বন্ধে এবং প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট করেছেন ভিপি প্রার্থী মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার। রিটে তিনি ঢাকা ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়েছেন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নাম ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। ডাকসু নির্বাচনের পাশাপাশি ডাকসু হল সংসদ নির্বাচনও স্থগিত নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে জুলিয়াসের রিটে।
জুলিয়াস সিজার তালুকদারের নাম ও ব্যালট নম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেয়া এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
ডাকসু নির্বাচনে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর গত ২৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশন ডাকসু নির্বচানের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। চূড়ান্ত তালিকায় ভিপি প্রার্থী হিসেবে জুলিয়াস সিজার তালুকদারের নাম ছিল। তার ব্যালট নম্বর ছিল ২৬।
তালিকা প্রকাশের পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হাউজ টিউটর ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনে জুলিয়াস সিজার তালুকদারের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়। কিন্তু নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল তার প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ পাঠায়। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন জুলিয়াস সিজারের প্রর্থিতা ও ব্যালট নম্বর বাদ দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে জুলিয়াস সিজার তালুকদারকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়ার কথা উল্লেখ করে গত ২৭ আগস্ট চীফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। এতে কাজ না হওয়ায় প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জুলিয়াস সিজার তালুকদার।