ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠার দৌড়ে আরও এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। শুক্রবার ভারতের লখনৌর অটল বিহারী বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৪৬ ওভার ৩ বলে ১৭৯ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। জবাবে ব্যাটে নেমে ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছায় আফগানরা।

এই জয়ে সেমিফাইনালে উঠার পথেও অনেকটা এগিয়ে গেল আফগানরা। কারণ পয়েন্টের হিসাবে তারা ধরে ফেলেছে দুই ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। সেই সঙ্গে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও জায়গা পাকা করে ফেললো আগানিস্তান।

ডাচদের দেয়া ১৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানদেরও। দলের সংগ্রহে ২৭ রান যোগ হতেই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ফিরে যান সাজঘরে। আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানও ফিরেছেন দলীয় ৫৫ রানেই।

তবে দুই ওপেনার আজ ভালো সূচনা এনে দিতে না পারলেও জয়ের বন্দরে ভিড়তে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আফগানদের। তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৭৪ রান যোগ করেন রহমত শাহ এবং হাসমতউল্লাহ শহিদী। অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে দলীয় সর্বোচ্চ জুটি গড়ার পথে নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিয়ে রহমত সাজঘরে ফিরেন দলীয় ১২৯ রানে।

তবে এ জুটি ভাঙলেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা ঠিকই পেয়েছে আফগানিস্তান। আর আজমত উল্লাহ ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে এ এ কাজটি ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ। এ দুজনের ৫১ রানের জুটিতেই টুর্নামেন্টে নিজেদের চতুর্থ জয় তুলে নেয় আফগানরা। ম্যাচ জয়ের পথে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন হাসমতউল্লাহ। ওমরজাই অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ওপেনার ওয়েসলি বারেসির উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। ব্যক্তিগত ১ রানে আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বারেসি। এরপর ম্যাক্স ও’ডাউড এবং কলিন অ্যাকারম্যান সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ৫০ রানের জুটি গড়েন। ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও এরপর নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান।

দলীয় ৭২ রানে ফেরেন ও’ডাউড (৪২) এবং কিছুক্ষণ পর অ্যাকারম্যানও (২৯) একই পথে ধরেন। দুজনেই রান আউটের শিকার। সবমিলিয়ে পরের ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। অবাক করা ব্যাপার হলো, এর মধ্যে ৩টিই রানআউট। এরপর দ্রুতই গুটিয়ে যেতে পারতো ডাচদের ইনিংস। কিন্তু সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেখট পরপর দুই বলে জীবন পান। পরে তার ব্যাট থেকে আসে দলীয় সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস।
এঙ্গেলব্রেখটকে দুইবার জীবন উপহার দিলেও এর জন্য খুব বেশি মূল্য চোকাতে হয়নি আফগানদের। শেষ পর্যন্ত তিনিও ফিরেছেন রানআউট হয়েই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে চারটি রানআউটের এটি দ্বাদশ ঘটনা। সর্বশেষ দুটি ঘটনার শিকার নেদারল্যান্ডস। একটি ২০১১ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং কলকাতায় আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি চারবার এধরনের ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।

লোয়ার মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডার কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ২০০ রান করাও সম্ভব হয়নি নেদারল্যান্ডসের পক্ষে। বিপরীতে আফগান স্পিনাররা দারুণ বোলিং করেছেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ নবি ও নূর আহমেদ। দুজন মিলে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। একটি উইকেট গেছে আরেক স্পিনার মুজিব উর রহমানের ঝুলিতে।

এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এলো আফগানিস্তান। ৭ ম্যাচে তাদের জয় ৪টি। অন্যদিকে ২ জয় নিয়ে নেদারল্যান্ডস আছে অষ্টম স্থানে। তাদের নিচে অবস্থান বাংলাদেশের। ৭ ম্যাচে মাত্র ২ জয় নিয়ে এরইমধ্যে সেমিফাইনালে উঠার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে সাকিববাহিনী। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে সেমি নিশ্চিত করেছে ভারত। এরপরের তিন স্থানে আছে যথাক্রমে- দক্ষিণ আফ্রিকা (১২), অস্ট্রেলিয়া (8) ও নিউজিল্যান্ড (৮)। নেট রানরেটে আফগানদের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে।