ডায়াবেটিস এখন আর শুধু বয়সের রোগ নয়—তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রার কিছু সাধারণ অভ্যাসই নিঃশব্দে বাড়িয়ে দিচ্ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। তবে সুখবর হলো, সময়মতো অভ্যাসগুলো বদলাতে পারলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই দেরি না করে জেনে নিন, আপনার দৈনন্দিন ভুলগুলো কোথায় লুকিয়ে আছে। ১. অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝোঁক

কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি জুস, বিস্কুট, কেক, সাদা রুটি—এসব খাবার খুব দ্রুত রক্তে সুগার বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার খেতে থাকলে ইনসুলিনের ওপর চাপ বাড়ে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২. উচ্চ ক্যালোরি ও কম ফাইবারযুক্ত খাবার

যাদের প্লেটে ভাজা, চর্বিযুক্ত, পরিশোধিত খাবার বেশি থাকে এবং ফাইবার কম থাকে, তাঁদের শরীরে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণও রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। ৩. বসে থাকা জীবনধারা—সবচেয়ে বড় অপরাধী

ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কাজ করা, ব্যায়াম না করা এবং কম নড়াচড়া করা—এসবই ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষণা বলছে, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম না করলে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।

৪. ওজন বৃদ্ধি ও পেটের চর্বি জমা

অতিরিক্ত ভিসারাল ফ্যাট (পেটের ভেতরের চর্বি) সরাসরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়। পেট মোটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের প্রথম শর্ত।

৫. মানসিক চাপ—অদৃশ্য শত্রু

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল বাড়ায়, যা রক্তে সুগারকে দ্রুত উপরে তুলতে পারে। প্রতিদিনের কাজের চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

৬. ঘুম কম হওয়া—অবহেলার ফল মারাত্মক

প্রতিদিন ৫–৬ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীর ঠিকমতো গ্লুকোজ প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না এবং সুগার বাড়তে থাকে। ভালো ঘুম ডায়াবেটিস প্রতিরোধের শক্তিশালী অস্ত্র।

৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল

দুটি অভ্যাসেই বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ ও রক্তে সুগার দুটোই বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো ইনসুলিনকে দুর্বল করে দেয়, যা ডায়াবেটিসের দিকে দ্রুত ঠেলে দেয়।

কীভাবে ঝুঁকি কমাবেন?

প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ঘুম ঠিক রাখা মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন/যোগ ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করা পরীক্ষা

ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে হলে জীবনযাত্রার ছোট ছোট অভ্যাসেই আনা দরকার বড় পরিবর্তন। আজ থেকেই সচেতন হন—আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে!