নানা প্রতারণার অভিযোগে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। সেই জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর ও ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার (৫ মে) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হারুন অর রশীদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পথে, রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা গরিব ও অসহায় মানুষকে তুলে এনে আশ্রয় দেওয়া হতো ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে। তাদের কারও কারও হাত-পায়ে পচনও ধরেছিল। যখন প্রয়োজন হতো অপারেশন তখন আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার নিজে ব্লেড ছুরি দিয়ে তাদের হাত, আঙুল কেটে ফেলতেন। রক্ত ঝরিয়ে, অপারেশনের নামে হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মাদকাসক্ত মিল্টন।

আশ্রমে থাকা অসহায়, বৃদ্ধ, বাকপ্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোকে ফেসবুকের ভিডিওতে দেখিয়ে টাকা আয় করাই ছিল তার ধান্দা। সেই টাকা তিনি তাদের পেছনে খরচ করতেন না। এখন পর্যন্ত তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় দুই কোটি টাকার তথ্য পেয়েছে ডিবি। তার আরও কোনো অর্থের সোর্স আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ডিবি প্রধান বলেন, আমরা মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আসলে ভয়াবহ ও রোমহর্ষক সব ঘটনা বেরিয়ে আসছে। তিনি বরিশালের উজিরপুর থেকে বাবাকে পিটিয়ে এসে, ওষুধের দোকানে চুরি করে, তারপর ঢাকায় এসে হঠাৎ করে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলে বসেন। সেখানে অসহায়, গরিব, শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোকে তার ফেসবুকে দেখিয়ে টাকা ইনকাম করতেন। কিন্তু সেই টাকাগুলো তিনি খরচ করতেন না।

হারুন বলেন, আমরা মিল্টনের স্ত্রীকে তার স্বামীর আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের নানাভাবে নির্যাতন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার স্ত্রী বলেছেন, এটি মোটেই ঠিক হয়নি। এজন্য তার বিচার হওয়া দরকার। মিল্টনের আশ্রমে থাকা অসুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হতো এবং ডাক্তারের কাছে নেওয়া হতো কি না এ নিয়েও তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি জবাবে বলেছেন, তার কথা মিল্টন শুনতেন না।

ডিবি প্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো প্রায় দুই কোটি টাকা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলেও ডিবিকে তিনি জানিয়েছেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ফাউন্ডেশনের কোনো কিছুর সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করেননি মিল্টন সমাদ্দার। তিনি সরকারি চাকরি করার কারণে নিজেও জড়িত হননি বলে জানিয়েছেন।

হারুন বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ মানুষগুলো অসুস্থ, হয়ত কারও হাতে পায়ে পচন ধরেছে, এমন হলে যে অপারেশনের প্রয়োজন হতো, তিনি তার থিয়েটারে নিয়ে তাদের হাত ও আঙ্গুলও কেটে ফেলতেন। এই কাজটি মিল্টন ব্লেড ব্যবহার করে করতেন। ফলে প্রচুর রক্তপাত হতো। ব্লেড ও ছুরি দিয়ে যে কাটাছেঁড়া তাতে মিল্টন আনন্দ ফিল করতেন। এমন একজন সাইকো মানুষ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি কিন্তু স্বীকার করেছেন তার অপারেশন থিয়েটারে ছুরি আছে, ব্লেড আছে। এগুলো আমরা উদ্ধার করেছি। তার টর্চারসেলে তিনি যে মানুষগুলোকে পেটাতেন তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন। তাদের পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তারা হৈচৈ করলেই তিনি তাদের পেটাতেন।

এটিকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে হারুন বলেন, যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন, সেই দেশেই অটিজমের নাম ধারণ করে কিছু বয়স্ক, অসহায়, বাকপ্রতিবন্ধী, প্যারালাইজড, অসহায় মানুষদের সংগ্রহ করে তিনি ফেসবুকে টাকা কালেকশন করে সেই টাকা মেরে খেতেন, তাদের চিকিৎসায় একটি টাকাও ব্যয় করতেন না। এটি একটি ভয়াবহ অপরাধ।

ডিবি প্রধান বলেন, তিনি (মিল্টন) আরেকটি কথা স্বীকার করেছেন, তা হলো, ৯০০ লোকের ডেথ সার্টিফিকেট তিনি তৈরি করেছেন। তাকে এ নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে, তিনি এত লাশ কোথায় দাফন করেছেন। কারণ ওইসব ব্যক্তি যদি মারা গিয়ে থাকে তবে তাদের ব্যাপারে তো একটি রেজিস্টার থাকবে।