ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট হারিকেন ‘ড্যানিয়েল’র তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড লিবিয়া। এতে অন্তত ২০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম। দেশটিতে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
শক্তিশালী ঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে। তীব্র ঝড়ের প্রভাবে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেনগাজি, সুসি, দেরনা ও আল মার্জ। লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, কেবল দেরনাতেই মৃত্যু হয়েছে দেড়শ’জনের। দু’টি বাধ ভেঙে তলিয়েছে ১ লাখ বাসিন্দার এলাকা। বিধ্বস্ত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিসরাতাও।
আল জাজিরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দেশটির উপকূলীয় শহরগুলোতে ধ্বংস হয়ে গেছে শত শত বাড়ি-ঘর। এ সব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে বারি-ঘর ও যানবাহন। আর এই বন্যায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দারনা শহর।
এদিকে, পূর্ব লিবিয়ার স্বঘোষিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ জানান, বন্যা ও ঝড়ে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ আছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে ২ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করেছেন তা পরিষ্কারভাবে জানাননি তিনি।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ আল-মোসমারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, যে দেরনা শহরেই মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
ভয়াবহ বন্যা ও বিপর্যয়ের জন্য দেরনা শহরের কাছাকাছি দুটি বাঁধের ভাঙনকে দায়ী করেন আল-মোসমারি, যার কারণে প্রাণঘাতী আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছিলো।
তবে বেনগাজির রেড ক্রিসেন্টের প্রধান, কাইস ফাকেরি নিশ্চিত করেছেন যে ঝড় ড্যানিয়েলের কারণে দেরনায় অন্তত ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শহরে ১০ ফুট উচ্চতার আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ত্রাইনা লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বলেছেন, ‘দারনা শহরটি পুরোপুরি পাহাড় ঘেরা, আর সেখানে এই বাঁধগুলো ধসে পড়েছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, শহরটিতে ৩০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি গড়িয়ে গেছে। আর আমরা দেখছি পুরো শহর ধ্বংস হয়ে গেছে।’
লিবিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হানি সেনিব আল জাজিরাকে বলেন, ‘সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বিদ্যুৎ ও নেই। দারনায় যে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে, প্রতি মিনিটে সেটি বাড়ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়বে… কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষ।’
এরইমধ্যে ত্রিপোলিভিত্তিক প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল দেশটির তিনটি অংশকে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অন্যান্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।