যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পাহারা দিয়ে আন্দোলন ঠেকাতে পারবেন না। পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। সরকারের পদত্যাগের দাবি সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। একটাই দাবি, এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ। আজ (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পূর্বক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিদ্যুৎ-গ্যাস-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দমন-নিপিড়নের প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগে ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে পৃথকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এই পদযাত্রা গোপিবাগ থেকে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নয়াবাজারে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল­াহ আল নোমান, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, রফিকুল আলম মজনুসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আর সময় নেই এখনই জেগে উঠতে হবে, ঢাকা মহানগরে মানুষে সয়লাব করে ফেলতে হবে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সাধারণ মানুষ গরীব হচ্ছে, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুৎ স্বাস্থ্যসেবা পায়না মানুষ অথচ উন্নয়নের কথা বলছে তারা।

তিনি বলেন, জেলে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারছে না। সরকারের ব্যর্থতায় দেশকে অকার্যকর করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সম্মেলনে এবারও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বাংলাদেশকে। আওয়ামী লীগ মূলত সন্ত্রাসী দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় বিদেশীদের কাছে সরকারের এমন বক্তব্যে ঘোড়াও হাসছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। এবার একতরফা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলেও জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে পাহারা দিচ্ছে। এখনও সময় আছে দেয়ালের লিখন পড়–ন, সরকারের পদত্যাগের দাবি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে। এখনও সময় আছে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, নয়তো পালাবার পথ থাকবে না। আমাদের একটাই কথা এই মুহূর্তে সরকার পদত্যাগ করুন, নয়তো জনগণ ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগের মাধ্যমে প্রমাণ হয় এই সংবিধান দিয়ে দেশের কাজ হবে না। দেশে গণলুট চলছে। জনগণকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে জয়ী হতে হবে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এবার ঢাকাবাসী রুখে দেবে।

এসময় মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার পদযাত্রায় ভয় পেয়ে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় যাবার জন্য নয়, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে মিছিল করছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যে সংবিধানে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল তার অধীনে নির্বাচন চাই। অন্য কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই না। ভারতকে আওয়ামী লীগকে নয় বাংলাদেশের জনগনকে সমর্থন দেয়ার আহŸান। আওয়ামী লীগের এবার শেষ সরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। দেশে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না করে সরকারকে পদত্যাগের আহŸান জানান তিনি। নয়তো যেকোনো পরিস্থিতির দায় সরকারের। যত টালবাহানাই করুক, সরকারের পদত্যাগ চাই। লুটপাট, মুদ্রাপাচারে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে আরও তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে হবে। এরইমধ্যে বাংলাদেশের মানুষের সাথে বিশ্ব বিবেক এক হয়েছে। বিদেশীরা ঢাকায় এসে বার্তা দিচ্ছে। সরকার গণতন্ত্র সুসংহত করছে না। গুম খুন নির্যাতন দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আগামী দিনে ঢাকাবাসীকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে রাস্তায় নামতে হবে। রাজপথেই সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।

আবদুল­াহ আল নোমান বলেন, যে আন্দোলন চলছে তা সরকার পতনের আন্দোলন। বিজয়ের মুখোমুখি বিএনপি। গণতন্ত্র ফিরে পেতে এই লড়াই জিততে হবে।

বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম বলেন, আবারো গ্রেপ্তার বাণিজ্য শুরু হয়েছে। মামলা নাই এমন ব্যাক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জোর করে আগামী দিনে নির্বাচনের দ্বিবা স্বপ্ন দেখছে সরকার।

এদিকে, একই দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরা জসিম উদ্দিন মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এই পদযাত্রা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন।