লেজের ধাক্কায় রান পাহাড়ে চাপা পড়লো বাংলাদেশ। কেশব মহারাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর সাইমন হার্মার প্রতিরোধ গড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে। তাইজুল ইসলাম টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ৫ উইকট পূরণ করে ১৫০ উইকেটের দেখা পেলেও নিশ্চিতভাবেই চাপে বাংলাদেশ। কারণ প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হওয়ার আগে করেছে ৪৫৩ রান।

আজ (শনিবার) পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা প্রোটিয়ারা ব্যাট করেছে ১৩৬.২ ওভার। যেখানে সর্বোচ্চ রান এসেছে মহারাজের ব্যাট থেকে। আসল কাজ বোলিং হলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি দেখাচ্ছেন ব্যাট হাতে কম যান না। এই ডানহাতি ব্যাটার খেলেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৪ রান। এর আগে ডিন এলগারের ৭০, তেম্বা বাভুমার ৬৭, কিগার পিটারসেনের ৬৪ রানে ভর করে বিশাল সংগ্রহ গড়েছে প্রোটিয়ারা।

সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেট পূরণ করেছেন তাইজুল। হার্মারকে আউট করে মাইলফলকটি স্পর্শ করেন বাঁহাতি স্পিনার। ৩৬ টেস্টে তার উইকেট এখন ১৫০। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে সবচেয়ে সফল বোলারও তিনি। অসাধারণ পারফরম্যান্সে ৫০ ওভার বল করে ১৩৫ রান খরচায় নিয়েছেন ৬ উইকেট। খালেদ আহমেদ ২৯ ওভারে ১০০ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার ১ উইকেট।

গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন কেশব মহারাজ। স্বীকৃত ব্যাটারের মতো ব্যাট চালিয়ে অস্বস্তি তৈরি করেছিলেন। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। অবশেষে তাকে থামানো গেছে। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিদায় নেন মহারাজ। তাকে ফিরিয়ে বাঁহাতি স্পিনার পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ৫ উইকেটের দেখা।

প্রথম দিন বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য এসেছিল খালেদ আহমেদের হাত ধরে। দ্বিতীয় দিনেও তা-ই হলো। ডানহাতি পেসার এনে দিয়েছেন প্রথম উইকেট। তার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন কাইল ভেরিয়েনে।

আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভেরিয়েনের সঙ্গে রান বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামেন উইয়ান মুল্ডার। তবে তাদের জুটিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। খালেদ আহমেদের গতির সামনে হার মেনে বিদায় নেন ভেরিয়েনে। প্রোটিয়া উইকেটকিপার ব্যাটার বোল্ড হওয়ার আগে করেন ২২ রান। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ছিল ৪ বাউন্ডারির মার।

তাকে বিদায় করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং কেশব মহারাজ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চাপ তৈরি করেন মুমিনুলদের ওপর। এই ব্যাটার আক্রমণাত্মক ঢংয়ে ব্যাট চালিয়ে বাড়িয়ে নিয়েছেন স্বাগতিকদের রান। তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন উইয়ান মুল্ডার। সপ্তম উইকেটে এই জুটি থেকে আসে ৭০ রান। বাংলাদেশের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলা জুটিটি ভেঙেছেন তাইজুল। লাঞ্চের ঠিক আগ মুহূর্তে মুল্ডারকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার। তার বাঁক খাওয়া বলে খেই হারিয়ে ৩৩ রানে বিদায় নেন মুল্ডার। ৭৭ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কা।

তবে থামানো যাচ্ছিল না মহারাজকে। লাঞ্চের আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি ৫০ বলে। দ্বিতীয় সেশনেও একইভাবে বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করে হাঁটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। যদিও তাকে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেতে দেননি তাইজুল। আক্রমণাত্মক মেজাজই কাল হয়েছে তার! তাইজুলের বলে বিগ শট খেলতে গিয়ে বোল্ডের শিকার মহারাজ। তবে ফেরার আগে খেলে গেছেন ৮৪ রানের কার্যকরী ইনিংস। ৯৫ বলের আগ্রাসী ইনিংসটি সাজান ৯ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায়।

তার বিদায়ের পর দলকে পথে রাখা হার্মারের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়া লিজাড উইলিয়ামস অবদান রেখেছেন ১৩ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: প্রথম ইনিংসে ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ (মহারাজ ৮৪, এলগার ৭০, বাভুমা ৬৭, পিটারসেন ৬৪, রিকেলটন ৪২, মুল্ডার ৩৩; তাইজুল ৬/১৩৫, খালেদ ৩/১০০, মিরাজ ১/৮৫)।