বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফাইনালে এসে হয়ে গেল বিশ্বকাপের চেয়েও উত্তেজনাকর! দর্শকদের সীমাহীন আগ্রহ মিরপুরের গ্যালারিতে লাল উৎসবে রূপ নিয়েছিল। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় হাজার দশেক বেশি দর্শকের উন্মাতাল উন্মাদনার প্রতিফলন অবশ্য মাঠের লড়াইয়ে দেখা গেল না। এর আগে তিনবার ফাইনালে হারা বরিশাল অবশেষে তামিম ইকবালের হাত ধরে বিপিএলে নিজেদের প্রথম শিরোপার দেখা পেল। রেকর্ড চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এই প্রথম হারল ফাইনালে।

টসে হেরে আগে ব্যাট করে বরিশালকে ১৫৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। জবাবে ৬ বল বাকি থাকতেই কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দেয় বরিশালের ফ্রাঞ্চাইজি। চারবার ফাইনাল খেলে কখনো না হারা কুমিল্লাকে এবার রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে; আর বরিশাল পেয়েছে প্রথমবার ট্রফি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেয়ার স্বস্তি।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দেওয়া ১৫৫ রান তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় ফরচুন বরিশাল। তামিম-মিরাজের জুটি টিকে থাকে অষ্টম ওভারে পর্যন্ত। দলীয় ৭৬ রানে তামিমের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ২৬ বলে ৩৯ রানের বিষ্ফোরক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন বরিশালের অধিনায়ক। স্কোরকার্ডে ৬ রান যোগ করতেই ফেরেন মিরাজও। ২৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ রান করে মঈন আলীর শিকার হন তিনি।

দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও কাইল মায়ার্স। মুশফিককে এক প্রান্তে রেখে চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ফোটাতে থাকেন মায়ার্স। দুজনে মিলে গড়েন ৫৯ রানের জুটি। দলীয় ১৪১ রানে মায়ার্সের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কার সৌজন্যে ৩০ বলে ৪৬ রান করেন মায়ার্স। স্কোরকার্ডে ৩ রান যোগ হতেই সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। তবে জয় পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বরিশালের। বাকি কাজটা সহজেই সেরেছেন মাহমুদউল্লাহ ও ডেভিড মিলার। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৭ রান করে। আর ৮ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মিলার।

এর আগে ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি চারবারের চ্যাম্পিয়নদের। ইনিংস শুরু থেকেই খেই হারাতে দেখা গেছে ব্যাটারদের। প্রথম ওভারে ঝলক দেখানোর আগেই সাজঘরে ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার সুনিল নারিন। তার পথ অনুসরণ করেন টপঅর্ডারের বাকি ব্যাটাররাও।

কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস দ্বিতীয় ওভারে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন। তার সাথে যোগ দেন তাওহীদ হৃদয়। দ্বিতীয় ওভারে এ দুই ব্যাটার তিনটি বাউন্ডারি মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি দুজনের কেউ। লিটন ১৬ এবং হৃদয় ১৫ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন।

জনসন চার্লস প্রথম থেকে নার্ভাস থাকলেও দুটি ছক্কা হাকিয়ে নিজের স্বকীয়তা জানান দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ব্যাটারও বরিশালের বোলারদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, আউট হওয়ার আগে ১৫ রান করেন। ইনিংস বড় করতে পারেননি মঈন আলীও। রানআউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ রান করে।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন জাকের আলী অনিক ও মাহিদুল ইসলাম। এ দুজন ২৯ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন। শেষ দিকে ঝড় তোলেন আন্দ্রে রাসেল। ১৯তম ওভারে জেমস ফুলারের ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন। তিনি খেলেন ১৪ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংস। এছাড়া জাকের আলী ২০ রানে অপরাজিত থাকেন।

বরিশালের ফুলার ৪ ওভারে ৪৩ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, কাইল মায়ার্স ও ওবেদ ম্যাককয় নিয়েছেন একটি করে উইকেট।