তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ভারত ও চীন দুই দেশেরই সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্প করবো। সেই বিষয়ে নয়াদিল্লি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।’
তিনি বলেছেন, চীন সম্ভাব্যতা যাচাই করছে, ভারতও করবে। তবে বাংলাদেশ সবদিক বিবেচনা করে যাদেরটা লাভজনক হবে সেটাই নেবে।
ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে বলেন, ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই তো সমাধান হয়ে গেল। তো সেটাই আমার জন্য সহজ হলো না? ভারত যখন এগিয়ে আসছে, আমরা যদি এটা করি, তাহলে পানি নিয়ে আর প্রতিদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না।
এদিকে গঙ্গা-তিস্তার আলোচনা নিয়ে আবারও আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে ‘পাশ কাটিয়ে’ ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ‘অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রত্যাশিত’।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা মমতা ব্যনার্জি বলেছেন, উনার ক্ষোভ যে উনার সঙ্গে আলোচনা করেনি, উনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি নিজেই তো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, উনি ছিলেন না। থাকলে নিশ্চয় উনাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম।
শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জির যে চিঠি, সেটা তো তিনি লিখেছেন উনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নাই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এভাবে আমার তো নাক গলানোর কোনো দরকার নাই। কিছু বলার দরকার নাই।
“আমার সঙ্গে সকলের সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সম্পর্কও খুব ভালো। আবার প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদী, তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো। উনাদের সব দলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। এটুকু বলতে পারি যে ভারতের দল মত নির্বিশেষে প্রত্যেকের সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।”
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্প আজকের না। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার মধ্যে দেয়া ছিলো। তিস্তা প্রকল্প করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে। আমাদের যৌথ কমিটি হবে। খালি পানি ভাগাভাগির বিষয় না। পুরো তিস্তা নদী পুনরুজ্জীবিত করা, উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা, নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা করা হবে।
তবে তিনি ডেজিংয়ের বিষয়ে মমতা ব্যার্নাজীকে সমর্থন করে বলেন তাদের নদীগুলোকে ড্রেজিং করা উচিত। ড্রেজিং করলে পানির সংকট মিটবে। আমরাও এখানে শুরু করেছি।
পরে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী গুলো নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে, আবার সমাধানও আছে। তিস্তা প্রজেক্ট আমরা নিয়েছি। আমাদেরকে চীন প্রস্তাব দিয়েছে, ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমরা বিবেচনা করবো। কোন প্রস্তাব নিলে আমার দেশের মানুষের কল্যাণ হবে সেটাই গ্রহণ করবো। তিনি বলেন তাদের দুদেশের কি সম্পর্ক, সেটা তাদের বিষয়, আমাদের না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যেহেতু ভারতের সাথে তিস্তার পানির দাবিটা আমাদের অনেক দিনের। ভারত যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো।