শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও জোড়া ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় সময় (সোমবার) ভোরে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার ৯ ঘন্টা পর আরেকটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে।
জোড়া ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার ৩ শতাধিক মানুষ। নিহতদের বেশিরভাগই তুরস্কের। আহত হয়েছে দুই দেশের ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। বহু মানুষ আটকা পড়েছে ধ্বংসস্তুপে। ফলে হতাহতের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে তুরস্ক সরকার। এছাড়া উদ্ধারকাজে পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সরকার। ভূমিকম্পটি পার্শ্ববর্তী ফিলিস্তিন , ইসরাইল, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও অনুভূত হয়।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের গাজিয়ানটেপে স্থানীয় সময় (সোমবার) ভোরে অনুভূত হয় শক্তিশালী ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মুহূর্তেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় হাজারো ঘর-বাড়ি। গভীর ঘুমের মধ্যেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ আশপাশের অঞ্চলও কেঁপে ওঠে। সিরিয়ার যে অংশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে তা সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত। কম্পন টের পাওয়া গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ফিলিস্তিন, ইসরাইল, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা, ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূ-কম্পনটি তুরস্কে গত ৮৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও শক্তিশালী। এর উৎপত্তি স্থল ছিল সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী প্রদেশ গাজিয়ানটেপ এর ২৩ কিলোমিটার পূর্বে। মাটির ১৮ কিলোমিটার গভীরে। সিরিয়ায় হিসাব রাখার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূকম্পন এটি। দেশ দুটিতে মূল ভূমিকম্পের পর মৃদু ভূকম্পন বা আফটার শক অনুভূত হয়েছে ৪০ বারেরও বেশি।
ভোরের ভয়াবহ ভুমিকম্পে ৯ ঘন্টা পর দুপুরে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের একিনোউ শহর। যা দুর্যোগের ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্যোগে দুই দেশেই বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছে হাজারো মানুষ। প্রতি মুহূর্তে হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছে মৃত ও আহত মানুষবাহী অ্যাম্বুলেন্স। জাতিসংঘের আশংকা- মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কল্পনারও অতীত। আর সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ভবনগুলো থেকে গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি সংস্থা জানিয়েছে, উদ্ধার কাজের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গাজিয়ানটেপ, আদানা ও ওসমানিয়েসহ ১০টি শহর সবচেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়ার আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা এবং টারতুসে মৃত্যু হয়েছে বেশি।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে উদ্ধারকর্মীরা। তীব্র ঠাণ্ডা বিরাজ করায় ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।
ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে সিরিয়া ও তুরস্ক সরকার। তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে এরইমধ্যে নিজ প্রশাসনকে সহায়তা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এছাড়া সহায়তা ও উদ্ধারকাজে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিশ্ব নেতারা।