কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের প্রধান ফটক বন্ধ করে শুধু পকেট গেট খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি এবং কার্জন হল এলাকাতেও জনসমাগম খুব একটা দেখা যায়নি। ক্যাম্পাসের ভেতরে যান চলাচলও সীমিত।

এ অবস্থায় আতঙ্কে হল ছাড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই হল ছাড়া শুরু করেছেন তারা। তারা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে পরিবার বেশ উদ্বিগ্ন। তাই তারা হল ছাড়ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র‍্যাব, দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবির গাড়ি। ভিসি চত্বরে অবস্থান করছেন কিছুসংখ্যক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

এর আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার পরপরই আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে প্রথমে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের পুলিশ সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। তাঁরা জানান, কোটার বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছাড়বেন না।

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শহিদুল্লাহ হলের দিক থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল টিএসসিতে জমায়েত হতে চাইলে পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া দেন। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দও শোনা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে নিউমার্কেট ও ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলে যায়।

বেলা আড়াইটায় টিএসসির ডাস চত্বরের পাশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ তিনজন এসে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের চলে যেতে বললে সেখানে তাঁরা শুয়ে পড়েন। এ সময় সাংবাদিকেরা তাঁদের চারদিক ঘিরে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা সেখানে অবস্থান করলে পুলিশ কিছুক্ষণ পর সরে যায়।

সাংবাদিকেরা চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য নেওয়ার সময় পুলিশের দিক থেকে জটলা উদ্দেশ্য করে চার–পাঁচটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে আজকের পত্রিকার সাংবাদিক আহমেদ শাবিব আবদুল্লাহসহ দুজন আহত হন। এ সময় সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে আখতার হোসেনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আটকের সময় তাঁকে মারধরও করা হয়।

কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে আখতার হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এর দায় সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।’