দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজিরা দিতে সময় চেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) তাকে হাজির হওয়ার জন্য বলেছিলো দুদক। আজ দুদকে হাজির হওয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন তিনি।
বুধবার (৫ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক এ তথ্য জানান।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনেছি দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাকে সময় দেওয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দুদক কাউকে নোটিশ করলে তিনি আসতে বাধ্য কিনা, সেটা আইনে সুস্পষ্ট বলা নেই। না এলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তার সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে। এই এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে। গত ২৮ মে বেনজীর ও তার স্ত্রী সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আজ ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
গত মার্চের শেষের দিকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, তারা কেউই দেশে নেই। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি ও হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৩ মে সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্য দিকে, গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেয়া হয়। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, তারা কেউই দেশে নেই।