প্রায় ৩ দশক পর খোঁজ মিলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক নূর চৌধুরীর। কানাডায় পালিয়ে যাওয়া এই খুনির অবস্থান প্রকাশ্যে এনেছে সেদেশেরই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি। ‘দ্য এসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আত্মগোপনে থাকা এই খুনি নূর চৌধুরীকে যেমন প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, তেমনি তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়ায় কানাডা সরকারের বাধা ও বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

২৭ বছর ধরে কানাডায় পালিয়ে থাকালেও এতদিন জানা যায়নি এই খুনীর অবস্থান, এমনকি তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবশেষে জানা গেছে নূর চৌধুরীর খোঁজ। কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি’র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কানাডায় স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলি চালানো খুনী নূর চৌধুরী।

শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় সিবিসি টেলিভিশনের ‘দ্য ফিফ্থ স্টেট’ বিভাগে প্রচারিত হয় ‘দ্য এসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, পরবর্তী স্বৈরাচারী শাসনামলে তাঁর খুনীদের কূটনৈতিক মিশনে যুক্ত করা, পালিয়ে যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার একাগ্র প্রচেষ্টা ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার ধারবাহিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারিক কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে, নেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পচাত্তরের নৃশংস সেই খুনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শেখ রাসেলের খেলার সাথী আব্দুর রহমান শেখ রমার নিজ মুখের বিবরণ।

‘দ্য ফিফথ স্টেট’ টিমের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জানিয়েছে ২০১১ সালে সিবিসি রেডিওতে দেয়া নূর চৌধুরীর একটি সাক্ষাতকারও। যেখানে সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে।

তবে এই মামলার আইনজীবী ও বাংলাদেশের বর্তমান আইনমন্ত্রী সিবিসিকে জানিয়েছেন, নূর চৌধুরীর এই দাবির কোন ভিত্তি নেই। তিনি বলেন ‘কেউতো তাকে নিষেধ করেনি, বাংলাদেশে এসে তার মামলা লড়তে ? তবে আমাদের কাছে শক্ত প্রমাণ আছে, সে সেদিন সেখানে ছিলো। এবং বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি হত্যা করা তিনজনের একজন সে’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, নূর চৌধুরী মিথ্যা বলেছেন, কারণ তিনি এই খুনীদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশ নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে কানাডার সাথে আলোচনা করছে। অথচ, কানাডার সরকার রাজি হয়নি। একজন অপরাধী ও রাজনৈতিক খুনীর জন্য কানাডা কেন দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক নষ্ট করতে চায়, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সিবিসি’র এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন কানাডার সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করেনি। এমনকি ২০০৬ সালে সেদেশের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি তদন্ত করে মতামত দেয় নূর চৌধুরীর মতো অপরাধীর কানাডায় থাকার অধিকার নেই।

পরবর্তীতে নূর চৌধুরী ‘দেশে ফিরলে ফাঁসির মুখোমুখি’ হতে হবে এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় কানাডায় অবস্থানের আবেদন করে। তবে কানাডার আদালত এই আবেদনের পরও জানায় বিশেষ বিবেচনায়, হত্যার মুখোমুখি হতে হবে এমন অপরাধীকেও কানাডার ফেরত দেয়া উচিত।

প্রতিবেদনে তাই কানাডারই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তার দেশের প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখেছে, কানাডা কি একজন খুনীর পক্ষ নেবে? একই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও। তিনি জানতে চান- কানাডা একজন খুনীর মানবাধিকার দেখছে, অথচ বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের প্রায় সবাইকে নৃশংসভাবে খুনের পরও তাঁর মানবাধিকার, তাঁর বিচার পাওয়ার অধিকার কেন দেখছে না?