কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সরকার পতনের এক দফা ও অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা সংঘর্ষ ও জ্বালাও পোড়ায় হয়েছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৬  জনের নিশ্চিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২৪ জন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, ফেনীতে আটজন, নরসিংদীতে ছয়জন, মাগুরায় চারজন, ঢাকায় তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, পাবনায় তিনজন, মুন্সিগঞ্জে দুজন, বগুড়ায় চারজন, রংপুরে তিনজন, সিলেটে তিনজন এবং বরিশাল, জয়পুরহাট, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও কিশোরগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছেন।

221

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় ৩২ জন আহত হয়েছে।

পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলেন— পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং পাবনা শহরের আরিফপুরের মাহিবুল (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী।

মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

অন্য দিকে এক দফা দাবির অসহযোগ আন্দোলকে ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলার দুই সংসদ সদস্যের বাড়িঘর ও থানায় ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, রোববার (৪ আগস্ট) আন্দোলনকারীরা প্রথমে সদর উপজেলার এসএস রোডে জড়ো হন এবং পরে বেলা ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। এর পরপরই সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এতে আরও তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হন।

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন অনেকেই।

নিহত তিনজন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা ছাত্ররা।

রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন ঢাকা মেইলকে তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন।

একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

দুজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ এবং অপরজনের বিষয় নিশ্চিত করেছেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন।

তিনজনের মধ্য দুজনের লাশ সদর হাসপাতালে রয়েছে ও একজন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালে রয়েছেন। নিহতের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম অঞ্জনা (৩৫)। তার বাড়ি সদর উপজেলায় যশোদল এলাকায়।

বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে বগুড়া শহরে একজন ও দুপচাঁচিয়ায় একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইজনের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদের একজন বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম (৪০)। তিনি বিএনপি কর্মী। অপরজন অজ্ঞাত ব্যক্তি (৬০)। তারা শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

অপরজন কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের মমিনুল ইসলাম (৩৪)। তিনি দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তার লাশ দুপচাঁচিয়া উপজেলা হাসপাতালে রয়েছে।

এছাড়াও আন্দোলনকারীরা বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়, বগুড়া সদর আসনের এমপি রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।