ধর্ম-বর্ণ ও মতের পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশের সব মানুষ একই পরিবারের সদস্য বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি, আমরা এক পরিবারের সদস্য। আমাদের নানা মত থাকবে, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু পরিবার একটা।’
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে। সেগুলোর জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরই এই সরকার যখন গঠন হয়, আগস্টের ৮ তারিখ আমি যখন বিমানবন্দরে উপস্থিত হলাম। তখন সবার কাছে আন্তরিকভাবে একটা আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেটা কোন রাজনৈতিক বা শ্রোতাপ্রিয় বক্তব্য ছিল না। বলেছিলাম আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত থাকবে, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু পরিবার একটা আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এটাতেই জোর দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শত পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা কারও শত্রু না। পরস্পরের শত্রু না। আমরা এক জায়গাতে, এক কাতারে ওখানে চলে আসি। যেখানে আমাদের জাতীয়তার প্রশ্ন আছে, পরিচয়ের প্রশ্ন আছে। আমরা বাংলাদেশি, আমরা এক পরিবারের সদস্য।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যখন শপথ গ্রহণ করলাম, শুনলাম যে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যচার চলছে। এরপরই আমি খোঁজ নিই এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরে চলে যাই। সেখানে আমাকে কিছু দাবি-দাওয়া দেওয়া হলো। তবে একটি দাবি হচ্ছে ‘আমাদের সবার সমান অধিকার। বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার ও কাজকর্মের অধিকার। সেগুলো আসবে সংবিধান থেকে এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেগুলো নিশ্চিত করা।’
ভুল তথ্যের বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আবার নতুন কথা হামলা হচ্ছে, অত্যাচার শুরু হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যম বলব না প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি, কী হচ্ছে। সবদিকে দেখলাম এটা হচ্ছে না। তথ্যের মধ্যে বিশাল ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা ভুল হতে পারে। তথ্যের ওপর বসে থাকার কিছুই নেই, এটার অর্থ অন্ধের মতো বসে থাকা। ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। খোঁজ নিতে হবে তথ্যের গরমিল কেন? তাতে ওরা যা বলছে তা কি মিথ্যা প্রচার? না আমরা যা বলছি তা মিথ্যা প্রচার। সত্যটা কোথায়?
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্যের কোনো ফারাক নেই। সঠিক তথ্য কীভাবে পাব, সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন। প্রকৃত তথ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কারণ কর্তা যা চায়, তারা সেভাবে বলে। আসলটা মন খুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এত বড় দেশে যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই হোক, দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।
ড. ইউনূস বলেন, প্রথম কথাটা হলো, এগুলো না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আমি যা বলছি তা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে। আমরা এক পরিবারের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেখানে তথ্য ও প্রতিকার হলো বড় বিষয়।
তিনি বলেন, আমি পেলাম তথ্য কিন্তু প্রতিকার পেলাম না। সমস্যা হয়ে গেলে সমাধান করতে হবে। আজকের আলোচনা খোলাখুলি, আমরা সবাই আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্যে কোনো বাধা নেই। তথ্যপ্রবাহ কীভাবে পাব, দোষীকে কীভাবে ধরব। যাতে সবাই সঠিক তথ্যটা পেয়ে যায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যার নাম দিয়েছি নতুন বাংলাদেশ। এটা আমাদের করতে হবে। আপনাদের কথা বলে সন্তুষ্ট করে আজকের মতো বিদায় দিলাম, তা নয়। এটা দ্রুত করতে হবে।
সংখ্যালঘু সমস্যার বিষয়ে অবাধ, সত্য তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করব? যে তথ্য দিচ্ছে সে যেন বিব্রত না করে তাও নিশ্চিত হতে হবে।