লঘুচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এ তথ্য জানান।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় সৃষ্ট বন্যা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলা প্লাবিত হয়েছে। বিপর্যন্ত হযেছে ঘেরের মাছসহ ক্ষেত্রের ফসল। পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন নদ নদীর পানি বেড়েছে।

ফেনীতে বন্যার পনিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে স্থানীয় স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবারসহ বিশুদ্ধ পানির সংকট। ফেনীর তিন উপজেলায় প্রায় ৮০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে, পানিবন্দি হয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। নোয়াখালীর ৯ উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানির তোড়ে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেশ কিছু স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক জনপদ। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত দুই লক্ষ মানুষ। নদ নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লবিত হওয়ায় জেলা শহরের সাথে এই তিন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে অনেক স্থানে। ইতিমধ্যে উপজেলাগুলোতে বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের সহায়তায় কাজ করছে বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায়  অনেক কম বলে দাবি বানভাসীদের।

গত তিন দিনের ভারী বর্ষণে কুমিল্লা নগরীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গোমতী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চল। গোমতীর চরের ৪ হাজার একর জমির ফসল ও সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।

নোয়াখালী জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি ক্ষেত।

মৌলভীবাজারের মনু ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বাড়ায় বাঁধ বেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে এই এলাকার মানুষ।

খাগড়াছড়িতে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরুং কবাখালি ইউনিয়ন ও জেলা সদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনও জলমগ্ন।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি- রাঙ্গামাটি- সাজেক সড়ক তলিয়ে গেছে। সাজেকের সাথে এইসব এলাকার যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

বৈরী আবহাওয়া ও জোয়ারের প্রভাবে বরিশালের কীর্তনখোলা ও বিষখালী নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে বাসিন্দারা।

পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। প্রবল বর্ষণের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবজি চাষিরা।

এদিকে, অবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, লঘুচাপ মৌসুমী বায়ুর সাথে মিশে গেলেও এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় আরো দুদিন হাল্কা থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার নদ-নদীর পানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।