৫৪৩ দিন পর অর্থাৎ প্রায় দীর্ঘ দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষের দ্বার খুলল আজ রবিবার  । করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে আজ থেকে। শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখরিত হয়েছে শ্রেণিকক্ষ।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপাসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। শিশুরাও অনেকদিন পর শিক্ষাঙ্গনে ফিরতে পেরে উদ্বেলিত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ব্যানার টানানো হয়েছে। কোথাও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে। অনেক দিন পর সশরীরে একে অপরকে দেখে গল্প-আড্ডায় মেতেছে শিক্ষার্থীরাও। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খোলার পর সাড়ে সাত লাখ শিশু করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে উৎকণ্ঠা পিছু ছাড়ছেনা অভিভাবকদের।

সকালে রাজধানীর কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে। তাদের পরনে সেই চিরচেনা স্কুল ড্রেস, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। তবে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরিধান করে স্কুলে এসেছে তারা।

তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও সহপাঠীদের সঙ্গে আগের সেই হইহুল্লোড় নেই। সামনের বেঞ্চ ধরা নিয়ে নেই হুড়োহুড়িও। শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে ছাত্রীরা দূরত্ব বজায় রেখে তারা স্কুলে প্রবেশ করছে।

এদিকে, স্কুলগুলোর ফটকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ফটকে স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কি-না, তা পরিদর্শন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী রাজধানীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন।

জানা গেছে, প্রায় ১৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি।

এছাড়াও অন্যান্য স্থানের পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম হুমকির মধ্যে পড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে রোববার থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস নেওয়া শুরু করা হয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে ওইদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে।

তিনি জানান, প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এ ক্লাসের সংখ্যা আরও বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, শুরুর দিকে ২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে। এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসবে।

তিনি আরও বলেন, স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করাতে হবে। স্কুলে আপাতত কোনো অ্যাসেম্বলি হবে না। তবে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।

পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও ডিপিই থেকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মৌলিক ক্লাস রুটিন প্রকাশ করা হলোও মাউশি থেকে একটি গাইডলাইন দিয়ে সেই মোতাবেক স্কুল-কলেজে ক্লাস রুটিন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে।

সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিদর্শনে রাজধানী আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করবেন। এছাড়া বেলা ১১টায় রাজধানী মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।