যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক নথিপত্র গোপন করে সাবেক এক পর্ণ তারকাকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে আনা ৩৪টি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

এই রায়ের ফলে প্রথমবারের মতো আমেরিকার কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। তবে আদালত আগামী ১১ই জুলাই এ মামলায় সাজা ঘোষণা করবে। এর চারদিন পরেই রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন দেয়ার কথা।

এই অবস্থায়ও ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে হারানোর জন্য তার যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। এমনকি তাকে যদি কারাগারেও যেতে হয় তবুও তিনি তার অবস্থান বজায় রাখবেন।

ট্রাম্পের আইনজীবী টোড ব্ল্যাঞ্চ বলেছেন, তার দল ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ আপিলের দিকে নজর রাখছে’ এবং ট্রাম্প নিজেই এই রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছেন।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি খুবই নিরপরাধ মানুষ’। নির্বাচনের দিন ভোটারদের কাছ থেকে আমার পক্ষে ‘প্রকৃত রায়’ আসবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বিচারটিকে ‘সাজানো’ এবং ‘অসম্মানজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বাইডেনের প্রচারাভিযান একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, বিচার দেখিয়েছে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ এতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প আমাদের গণতন্ত্রের জন্য যে হুমকি সৃষ্টি করেছেন তা এর চেয়ে বড় কখনও হয়নি।’

বিচারক জুয়ান মার্চান মিলওয়াকি সিটিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের চার দিন আগে ১১ জুলাই থেকে সাজার ঘোষণা করেন। যেখানে ট্রাম্প পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পাওয়ার কথা।

১২-সদস্যের জুরি দুই দিন ধরে ১১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর ফোরম্যান (জুরি) কয়েক মিনিটের মধ্যে রায়ের সর্বসম্মত উপসংহারটি পাঠ করেন।

বিচারক মার্চান ‘কঠিন এবং চাপের কাজ’ সম্পন্ন করার জন্য বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা চলছে। তবে নির্বাচনের আগে সে সব মামলায় চূড়ান্ত রায়ের আশা করা হচ্ছে না।

এমন ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আদালতের সিদ্ধান্ত এবং আগামী ৫ই নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত অন্যান্য মামলায় অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প আদৌ নির্বাচনে প্রার্থী থাকতে পারবেন কিনা। সেই বাধা না থাকলেও কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করা সম্ভব কিনা, সেই বিষয়টিও আইনি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আদালত আউন অনুযায়ী প্রতিটি অভিযোগের কারণে ট্রাম্পকে চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের রায় দিতে পারে। কিন্তু তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে। আগেই তিনি জামিন পেয়েছিলেন। আগামী ১১ই জুলাই আদালত রায় দেবে বলে বিচারপতি জানিয়েছেন। এর ঠিক চার দিন পরেই রিপাবলিকান দলের কনভেনশনে ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পাওয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করলে ট্রাম্প নিজেকে ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন বলে কিছু আইনি বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।