পোর্ট এলিজাবেথে লাঞ্চ বিরতির পর পর এলগারকে ফেরানো গেলেও প্রতিরোধ গড়ছিলেন কেগান পিটারসেন। তেম্বা বাভুমাকে সঙ্গী করে বাংলাদেশের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তিনি। প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশনের প্রায় শেষভাগে এসে প্রোটিয়া ব্যাটারের প্রতিরোধ ভেঙেছেন তাইজুল।
অবশ্য তাইজুলের দ্বিতীয় সাফল্যের পেছনে স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথেরও ভূমিকা আছে। উইকেট পতনের আগে দেখা যাচ্ছিল বাউন্ডারি লাইনে তাইজুলকে টিপস দিচ্ছিলেন লঙ্কান স্পিনিং গ্রেট। এর পর ৫১ তম ওভারে বল করতে এসে গুরুর মন্ত্রেই সাফল্য ধরা দেয় তাইজুলের। বার বার এগিয়ে এসে খেলছিলেন পিটারসেন। কিন্তু তাইজুলের গুড লেংথের ডেলিভারিতে এবার পরাস্ত হন এগিয়ে এসেও। বল প্যাডে লাগলে আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আউট দেননি শুরুতে। মুমিনুল এবার বিলম্ব না করে রিভিউ নিলে সাফল্য পেয়ে যান সঙ্গে সঙ্গে। কেগান অবশ্য বিশ্বাসই করতে চাচ্ছিলেন না! তাতে ১২৪ বলে ৬৪ রান করা ব্যাটারকে ফিরতে হয়েছে হতাশায় মাথা নুয়ে। চতুর্থ হাফসেঞ্চুরির দেখা পাওয়া এই ব্যাটারের ইনিংসে ছিল ৯টি চার।
দ্বিতীয় টেস্টে চা পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের স্কোর ৫৮ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান। ক্রিজে আছেন রায়ান রিকেলটন (৭) ও তেম্বা বাভুমা (৩৩)। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ মাত্র এক উইকেট ফেলতে পারলেও এই সেশনে নিতে পেরেছে দুই উইকেট। প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় সেশনে যোগ করতে পেরেছে ৯২ রান।
তাসকিন আহমেদ না থাকায় এক পেসার কমিয়ে স্পিন শক্তি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে সফরকারীরা নেমেছে দুই পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে। দ্বিতীয় টেস্টে ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ শুরু করেছিল স্পিন দিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এলেও সুবিধা করতে পারেননি। টস জিতে প্রোটিয়া ব্যাটাররা আসলে কোনও সুযোগই দিচ্ছিলেন না ব্যাটিংয়ে।
তাইজুল ইসলামকে যা একটু সমীহ করেছেন এলগাররা। বাকি সবার ওপর দিয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। লাঞ্চের আগে বোলিংয়েও ছিল না কোনও ধার, ছন্দহীন বোলিংয়ে খুব একটা পরীক্ষাও নিতে পারেননি খালেদ-এবাদতরা।
প্রথম সেশনে একমাত্র উইকেট হিসেবে আউট হয়েছিলেন সারেল এরউই। আসলে তৃতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু আফসোসে পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। রিভিউ না নেওয়ায় উইকেট পাওয়া হয়নি। খালেদ আহমেদের বল সারউইয়ের পায়ে আঘাত করলে ওঠে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন। তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার আলাহুদিন পালেকার। কিন্তু পরে হকআইয়ে দেখা গেছে রিভিউ নিলেই আউট হয়ে যেতেন এরউই।
বোলার খালেদ ছিলেন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। রিভিউ নিতে বারবার ‘অনুরোধ’ করছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হককে। বাংলাদেশ অধিনায়ক বোলারের কথায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারলেন না। তাই উইকেটকিপার লিটন দাসের ইশারার অপেক্ষায় থাকলেন। সেখান থেকেও আসেনি জোরালো কিছু। দোটানায় থাকা মুমিনুল সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। শেষেমেশ যখন রিভিউয়ের সংকেত দিতে যাচ্ছিলেন, ততক্ষণে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ জানানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে রিভিউ আর নেওয়া হয়নি। হকআইয়ে দেখা গেছে, ব্যাটে না লাগা বল সরাসরি আঘাত করে স্টাম্পে। ফলে রিভিউ নিলে শুরুতেই উইকেট আসতো বাংলাদেশের ঘরে।
অবশেষে ওই খালেদই ফিরিয়েছেন এরউইকে। যে উইকেট আসতো তৃতীয় ওভারে সেটা আসে ১২তম ওভারে। উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি করে প্রোটিয়া ওপেনারকে তিনি ফিরিয়েছেন ২৪ রানে। ৪০ বলের ইনিংসে এরউই মেরেছেন ৪ বাউন্ডারি।
বিপরীতে আগের দুই ইনিংসের মতো পোর্ট এলিজাবেথেও আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করলেন এলগার। ৬৬ বলে পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরি। অবশেষে তাকে ফেরানো গেছে লাঞ্চ বিরতির পর। তাইজুলের ভেল্কিতে কাটা পড়েন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক ধরা পড়েন উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে।
ফেরার আগে চলমান সিরিজে টানা তৃতীয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন এলগার। এবার ৭০ রানে আউট তিনি। ৮৯ বলের ইনিংসটি এলগার সাজান ১০ বাউন্ডারিতে। পাশাপাশি শেষ ৬ ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম ফিফটি প্লাস স্কোরের দেখা পেয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
এলগারকে ফেরানোর বেশ কিছুক্ষণ পর নেমেছিল বৃষ্টিও। তাতে ২৫ মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় দ্বিতীয় সেশনের বাকি খেলা। তাতে প্রোটিয়াদের রানের রাশ টেনে ধরার সুযোগ পায় সফরকারী দল। তবে বাভুমা-পিটারসেন জুটি প্রতিরোধ গড়েই খেলতে থাকে। ৫১ রান যোগ করে ভালো কিছুর বার্তা দিচ্ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের এই প্রতিরোধ ভেঙে যায় তাইজুলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে।