ইসলাম ধর্মের নামে কেউ যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (সোমবার) দেশে দ্বিতীয় পর্বে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন কালে এ নির্দেশ দেন তিনি।
বেলা ১২টার দিকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ইসলামের সঠিক চর্চা যাতে হয়, সমাজ থেকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা যেন দূর হয় সে কারণেই এসব মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১০ই জুন প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এসব মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
মডেল মসজিদের উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করছি, ইসলাম ধর্ম যাতে আরও উন্নতভাবে পালন করতে পারে। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা যাতে পায়। ইসলামের মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসার যাতে ঘটে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই সত্যিকারের ইসলামের চর্চা হোক। প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই এই মডেল মসজিদ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে আলেম-উলামাকে সবাই শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। এজন্য সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দূরীকরণে তাদের ভূমিকা জরুরি। তাদের বয়ানে মানবিক গুণগুলোর কথা যেন উঠে আসে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর দ্বারা ইসলামেরও বদনাম হয়। এজন্য এ সম্পর্কে সবার সচেতনতা কামনা করেন তিনি। ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে অভিভাকদের সচেতন থাকতেও বলেন সরকারপ্রধান।
আওয়ামী লীগ সবসময় ইসলামের খেদমত করে জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ইসলামের খেদমতে অনেক অবদান রেখে গেছেন। আমরাও বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করে ইসলামের খেদমত করে চলেছি।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নতুন নির্মিত মসজিদগুলো হলো-
ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, নরসিংদীর সদর উপজেলা, মনোহরদি, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা, জেলা সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার ধুনট উপজেলা, নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা, শেরপুরের সদর উপজেলা, পিরোজপুরে সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকশা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুর জেলা সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলা সদর এবং জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা।
মন্ত্রণালয় জানায়, মডেল মসজিদগুলোতে ১৩টি বিশেষ সুবিধা থাকবে। এগুলো হলো মসজিদে হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণসহ পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা, নারী ও পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের পৃথক ব্যবস্থা, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা ও দীনি দাওয়া কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা।
চারতলা বিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ জন নামাজ আদায় করতে পারবেন। আর তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদে একত্রে ৯০০ জনের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।