প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বেগম রোকেয়ার জীবনাদর্শ ও নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আজ (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রী ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে দেয়া তার এক বাণীতে একথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং যাঁরা এবছর ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ পেয়েছেন তাঁদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীর মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। ফলে বাংলাদেশের নারীরা এখন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমহিমায় ও সক্ষমতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সফল বাস্তবায়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতি তথা সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর অবস্থান এখন সাবলীল এবং সুদৃঢ়।’
তিনি বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আজ বিশ্বে সপ্তম স্থানে আবথান করছে বাংলাদেশ। ক্ষমতায়নের অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগেও নারীর পদচারণা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বর্তমানে সংরক্ষিত আসন ও নির্বাচিত ২২ জনসহ ৭২ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ১০ হাজারের অধিক। রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী, তৈরি পোশাক কর্মীদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন আধুনিক নারী। তিনি প্রখম উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তাঁর এই উপলব্ধি ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পথিকৃৎ।
তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এবং সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া তা সম্ভব নয়। জাতির পিতা জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করেন। চাকুরী ক্ষেত্রে নারীদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করেন এবং ১৯৭৩ সালে তার গৃহীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নারীকে সম্পৃক্ত করতে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণাকে বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ও জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়ন, সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা প্রদান ও কর্মমূখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
