বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায় বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণা গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ামূলক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদও ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপক্ষে ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা নেবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধারে ১৬ বছর এ দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আহত ও গুম হয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে।

বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিস্টদের কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন, গুম-খুনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার সংগ্রাম ও আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে। বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির সব শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় ছয় বছর কারাগারে আটক রাখা হয়। ৫ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকে আজীবন কারাদণ্ড এবং বিরোধী নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, কারাগারেই অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল সরকার। নির্যাতিত, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিটি নেতাকর্মী লড়াই করেছেন।

ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায় বিএনপি

মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষের সেই সংঘবদ্ধ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ফ্যসিস্ট হাসিনা। এই অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে আবারও সৃষ্টি হয় এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আশা।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (৫ আগস্ট) প্রফেসর ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন।

মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। বিএনপি বিশ্বাস করে ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে, তা পালনের মধ্য দিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে। এর মাধ্যমে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সব স্তরের মানুষ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছেন। বিএনপি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

‘নির্বাচনের ঘোষণা ঐতিহাসিক’

মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের বৈঠকে নির্বাচনের সময় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্ধারণের ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিএনপি। এই ঐতিহাসিক ঘোষণা গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে।

তিনি জানান, বিএনপি মনে করে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি এই নির্বাচনকে সফল করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

অন্তর্র্বতী সরকারকে ধন্যবাদ

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত এক বছরে অনেক প্রতিকূলতা সত্তেও গণতন্ত্রের পথকে সুগম করার উদ্যোগের ও প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ড. ইউনূস, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সদস্য; যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের আন্তকিরক ধন্যবাদ জানাচ্ছে বিএনপি এবং প্রত্যাশা করছে অতি দ্রুত রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, আসুন শহীদ জিয়ার স্বপ্নের, বেগম খালেদা জিয়ার আজীবনের সংগ্রাম-গণতান্ত্রিক এবং তারেক রহমানের আধুনিক, মানবিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করি।