বিএনপি যতই নালিশ করুক, তাতে কান না দিতে ‘বিদেশি বন্ধুদের’ প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, “নির্বাচন কারও জন্য বসে থাকবে না। দুনিয়ার অন্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে হবে।
শুক্রবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
কূটনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই নালিশ করুক, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন এবং অংশগ্রহণমূলক একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে। আপনাদের কারও এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। হাঁটু ভাঙা, কোমর ভাঙা (বিএনপি) দল যতই কাকুতি-মিনতি করুক, এদের প্রলাপ শুনে লাভ নেই।’
কূটনীতিকদের দেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কথা বলুন জনগণের সঙ্গে গিয়ে। এ নগরীতে জনস্রোতের মধ্যে কূটনীতিক বন্ধুরা আপনারা সিভিলে গিয়ে কথা বলুন। মানুষ কী চায়।’
প্রায় এক যুগ বিএনপির সম্মেলন হয় না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে কোনো সম্মেলন ছাড়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটা সম্মেলন হয়েছে। ঘরে যাদের গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র কীভাবে দেবে? তিনি বলেন, ‘কূটনীতিক বন্ধুদের বলব, এই কথাটা তাদের জিজ্ঞেস করুন। তাদের ঘরে গণতন্ত্র নেই কেন?’
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কেনাকাটা না করার যে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাহস আছে। কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা সত্যের প্রশ্নে আপস করেন না। অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।’
তিনি বলেন, “ফখরুল সাহেব যত লাফালাফি করেন, আন্দোলনের দিন শেষ। পদযাত্রা মানববন্ধন করেন, আন্দোলনের জন্য মানুষ আর আসবে না। মানুষ বুঝে গেছে কোমড়ভাঙা দল বিএনপিকে দিয়ে কিছুই হবে না। এখন বিএনপির কর্মীরা একজন আরেকজনকে বলে, ‘কী আন্দোলন করবে, এ তো হাঁটু ভাঙা দল’। বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে না।
“এটা সারা দেশে প্রমাণ হয়ে গেছে যে, বিএনপি আন্দোলনে পরাজিত। নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ধারে কাছেও যেতে পারবে না। এজন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতায় যেতে।”
কাদের বলেন, “আন্দোলনে নেতা নেই, নির্বাচনে নেতা নেই। কাকে নিয়ে এগোবে? কাকে নিয়ে ভোট করবেন? কাকে নিয়ে শেখ হাসিনাকে হটাবেন? অস্ত্র নিয়ে, বোমা মেরে, পেট্রোল বোমা আর যদি মারতে চান- বাংলার জনগণ রুখে দাঁড়াবে।”
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ‘অন্তিম যাত্রা’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “উপরে উপরে পদযাত্রা আর তলে সহিংসতা। উপরে দেখাচ্ছে আমরা নরম, ভেতরে ভেতরে আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বিএনপির গুলশান ও নয়াপল্টন অফিসকে গুজব আর মিথ্যার কারখানা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতারা গুলশানে একটি গুজবের কারখানা করেছে। সেখান থেকে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ায়। অনলাইনে আজগুবি যতসব মিথ্যা কথা বলে অপপ্রচার করছে।
“মিথ্যাচারের আরেকটি ফ্যাক্টরি নয়াপল্টনে। সেখান থেকে ষড়যন্ত্র আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে নালিশের রাজনীতি করছে। শেখ হাসিনার সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসতে টাকা ছড়িয়ে লবিং করছে, ষড়যন্ত্র করছে।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে দেশে দেশে সংকটের চিত্র তুলে ধরে কাদের বলেন, “আজকে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩৩ ভাগ, আর্জেন্টিনা মেসির দেশ- তাদের মূল্যস্ফীতি ১০০ ভাগ, তার্কিতে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে মূল্যস্ফীতি ৮৬ ভাগ; সেখানে শেখ হাসিনা এখনও সামাল দিয়ে ৯ এর নিচে রেখেছেন মূল্যস্ফীতি।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।