‘ডি’ গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যেই ছিটকে গেছে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে সুপার এইটে কোয়ালিফাই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তলানিতে থাকা নেপাল কাগজে-কলমে টিকে থাকলেও শক্তিমত্তা বিবেচনায় তাদের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তাই সুপার এইটের লড়াইয়ে বাংলাদেশের পথে কাঁটা হয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। এবার মুখোমুখি লড়াইয়ে ডাচদের ২৫ রানে হারিয়ে সমীকরণ সহজ করল টাইগাররা। ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
ডাচদের ব্যাটিংয়ের একটা পর্যায়ে দারুণ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বিপদের সময় ট্রাম্পকার্ড বের করলেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। ১৫তম ওভারে দুই উইকেট শিকার করে ম্যাচের চেহারা বদলে দিলেন তিনি। অবশেষে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইটের পথ উজ্জ্বল করলো বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভ্যালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৪ রানের বেশি নিতে পারেনি ডাচরা। এতে ২৫ রানের পরাজয়ে অলিখিতভাবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজলো তাদের।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকে ডাচরা। তবে টাইগার দলপতি শান্তর কৌশলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই উইকেট হারায় তারা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। তার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লেভিট।
তাসকিনের পর বল হাতে সাফল্য এনে দেন তানজিম। তার বলে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে দারুণ রিফ্লেক্সে ফিরতি ক্যাচ নেন তানজিম। এতে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় ডাচরা।
ইনিংসের সপ্তম ওভারেই দলীয় ৫০ পূর্ণ করে ডাচরা। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বিক্রমজিৎ সিং ও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। এরপর তাদের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বলে ১৬ বলে ২৬ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিক্রম।
এরপর নিয়মিত বাইন্ডারি আর দুর্দান্ত জুটিতে টাইগারদের হতাশা বাড়াতে থাকেন এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেখট। তবে এবার হুমকি হয়ে দাঁড়ান রিশাদ আহমেদ। তার অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করা বলে লাইন মিস করেন এঙ্গেলব্রেখট। লেগ খেলতে গিয়ে আউটসাইড-এজড ক্যাচ তুলে দেন। কাভারে সহজ ক্যাচ নেন তানজিম। এতে এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ভাঙে তার ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি। ২২ বলে ৩৩ রানে ফেরেন এঙ্গেলব্রেখট।
এক বল ব্যবধানেই বাস ডি লিডিকে ফেরান এই স্পিনার। রিশাদের টার্নে পরাস্ত হন ডি লিডি। লিটনের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন এই ব্যাটার।
রিশাদের জোড়া আঘাতের পর সাকিবের ওভারে মাত্র ৫ রান নিয়েছিল ডাচরা। এরপর ডেথ ওভারে এসে ডাচদের ভোগান মোস্তাফিজ। তার বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন স্কট এডওয়ার্ডস। এই ওভার থেকে আসে মাত্র ১ রান।
শেষ ১২ বলে ৩৬ রান দরকার ছিল ডাচদের। তবে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি তারা। এতে ২৫ রানের জয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে তিন রান নেয় বাংলাদেশ। পরের ওভারেই নেদারল্যান্ডস বোলিংয়ে নিয়ে আসে আরিয়ান দাত্তকে। আগের ম্যাচের একাদশে একটি বদল এনে তাকে ঢুকিয়েছিল ডাচরা। তাদের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে স্রেফ দুই বল দরকার হয় আরিয়ানের।
যদিও তাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দায়ই বেশি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি, ৩ বলে করেন ১ রান। শান্তর বিদায়ের ওভারে আসে স্রেফ ২ রান। পরের ওভারে গিয়ে হাত খোলেন তানজিদ হাসান তামিম। একটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান তিনি।
কিন্তু পরের ওভারে আবার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার আরিয়ানের বলে সুইপ করেন লিটন। কিন্তু অনেকটুকু দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন অ্যাঙ্গলব্রেখ। এরপর দারুণ জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও তানজিদ হাসান তামিম।
তারা দুজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। এই ম্যাচের আগে অনেক কথা হয়েছিল সাকিব আল হাসানের অফ ফর্ম নিয়ে, রানে ফেরেন তিনি। তাদের ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি ভাঙে পল ভ্যান মেকেরিনের বলে তানজিদ ফিরলে। বাতাসের বিপক্ষে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ভাস ডি লিডের হাতে। ২৬ বলে পাঁচটি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তানজিদ।
উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারিও কম আসতে থাকে। এর মধ্যে ১৫ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে যান তাওহীদ হৃদয়। টিম প্রেঙ্গেলের বলে বোল্ড হন আগের দুই ম্যাচে দারুণ করা এই ব্যাটার।
উইকেটে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। তবে ১৭তম ওভারে গিয়ে ১৬ রান তোলেন টিম প্রিঙ্গেলের বলে। যদিও ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ভ্যান মেকেরিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দেন তিনি। ২১ বলে ২৫ রান করে সাজঘরে ফেরত যান রিয়াদ।
৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০ ও বিশ্বকাপে ১৭ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন সাকিব। শেষ অবধি উইকেটে থেকে দলকে ভালো সংগ্রহও এনে দেন তিনি। জাকেরের সঙ্গে মিলে শেষ দুই ওভারে আনেন ২৬ রান। ৯ চারে ৪৬ বলে ৬৪ রান করেন সাকিব। ৭ বলে ৩ চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের।