প্রায় ১৭ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই সুপার এইটে খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর মাঝে অনেকগুলো আসর খেললেও গ্রুপপর্ব পার করা হয়নি। এবার নেপালকে উড়িয়ে লম্বা সময়ের সেই আক্ষেপ মিটিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর আবারও সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে সোমবার কিংস্টনে নেপালকে ২১ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। ১০৭ রানের লক্ষ্যে ৪ বল বাকি থাকতে ৮৫ রানে গুটিয়ে যায় নেপাল।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তানজিম হাসান সাকিব। ৪ ওভারে ২ মেডেনসহ ৭ রানে ৪ উইকেট নেন এই ডানহাতি তরুণ পেসার। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ স্রেফ ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান।

নেপালের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়ার নায়ক তানজিম। ডানহাতি এই পেসারকে দিয়ে ৪ ওভারের টানা স্পেল করান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তানজিমও তাকে হতাশ করেননি। ২ মেডেনসহ স্রেফ ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি।

নেপালকে আটকাতে হলে শুরু থেকেই চাপ সৃষ্টি করতে হতো। যদিও প্রথম দুই ওভারে কোনো উইকেট পায়নি। তবে তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। দ্বিতীয় বলে কুশল ভুর্তলকে ফুলটস ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ডানহাতি এই পেসার। তার চতুর্থ বলটি মিডঅফের ওপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন অনিল শাহ। কিন্তু ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ডাবল উইকেটের ওভারটি তানজিম শেষ করেন মেডেন দিয়ে।

চতুর্থ ওভারে অবশ্য খরুচে ছিলেন তাসকিন। ১১ রান খরচ করেন তিনি। তবে পঞ্চম ওভারে এসে নেপালের অধিনায়ক রোহিত পৌড়েলের উইকেট তুলে নেন তানজিম। এর আগে যদিও দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় দুজনের মধ্যে। সেই রেশ টিকল না খুব বেশিক্ষণ। তানজিমের বলে পয়েন্টে থাকা রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১ রান করা রোহিত।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আসিফ শেখকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। আর নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে সন্দ্বীপ জরাকে শিকার করেন তানজিম। রোহিতের মতো সন্দ্বীপও ধরা পড়েন পয়েন্টে থাকা রিশাদের হাতে।

বিপর্যয়ে থাকা নেপালের এরপর হাল ধরেন কুশল মল্লা ও দীপেন্দ্র সিং ঐরী। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে পঞ্চম উইকেটে ৫২ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন তারা। সেই জুটি ভাঙে শান্তর হাতে এসে। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে মল্লার (২৭) দারুণ এক ক্যাচ নেন তিনি। পরের ওভারে গুলশান ঝাকে ফেরান তাসকিন।

শেষের দ্বায়িত্বটা সাকিব সামলে নেন। ইনিংসের শেষ তম ওভারে প্রথম দুই বলে পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে নেপারকে তামিয়ে দেয় ৮৫ রানে।

এর আগে, এই ম্যাচের উইকেট কেমন হতে পারে, সেই বিষয়ে ভালোই ধারণা ছিল নেপালের। তাইতো টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত অধিনায়ক রোহিত পাউডেলের। আর নেপালের সেই সাজানো ফাঁদে পা দেয় বাংলাদেশ। প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার তানজিদ তামিম। সোমপাল কামির প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে চেয়েছিলেন তামিম। টাইমিংয়ে গড়বড়ে বল যায়নি বেশিদূর। ক্যাচ ধরেন কামি নিজেই। আগের ম্যাচে দারুন শুরু এনে দেওয়া তামিম এই ম্যাচে ফিরলেন গোল্ডেন ডাক মেরে।

এরপর অধিনায়ক শান্ত এসেও পারেননি চাপ সামাল দিতে। উল্টো ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দলের চাপ বাড়িয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৫ বলে ৪ রান করে আইরির বলে বোল্ড হন তিনি। লিটন জীবন পেয়েও জীবন লম্বা করতে পারলেন না। পঞ্চম ওভারে কামিকে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন লিটন। ১২ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

আর লামিচানের ঘূর্ণিতে সুইপ শট খেলতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন তাওহিদ। ৭ বলে ৯ রান করেন তিনি। সবমিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। পরবর্তীতে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান চাপ সামালের চেষ্টা করলেও তাদের জুটি বড় হয়নি।

দলীয় ৫২ রানের মাথায় ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। সাকিবের শট মিড অফে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে গেলেও দৌড় দেন তিনি। অপর প্রান্তে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহও ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান। তাতেই ভুল হলো। সাকিব বল ফিল্ডারের হাতে থাকায় ফিরে যান, কিন্তু ক্রিজের মাঝামাঝি চলে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ পারেননি। রানআউট হন তিনি। দারুণ ইনিংসের আভাস দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ১৩ রানে।

এরপর উইকেটের মিছিলে যোগ দেন সাকিব নিজে। গত ম্যাচে ৬৪ রানের ইনিংস খেললেও এই ম্যাচে ২২ বলে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। রোহিতের ঘূর্ণিতে আটকা পড়েন তিনি। পিচ করেই হাল্ক বাঁক খেয়ে আঘাত করে সাকিবের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি। এরপর শেষদিকে জাকের আলী-রিশাদ হোসেনরা চেষ্টা করলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেননি।