বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সপ্তাহব্যাপী আজ মাঠে নামছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় দল। বুধবার দোসরা জুলাই থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ ঢাকায় নানা কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীনদের এই জোট। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল। কর্মসূচির প্রথম দিন বুধবার রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

১৪ দলের গত সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার থেকেই মাঠে নামছে ১৪ দলীয় জোট। সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন আজ বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে সমাবেশ করা হবে। এর পর আগামী ছয় দিনে রাজধানীর আরও ছয়টি স্পটে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন আয়োজনের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

গত ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তারা ১২ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ একাই শান্তি সমাবেশ ও সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি নিয়ে সরকারবিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলার চেষ্টা করছিল। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে ঢাকাসহ সারাদেশেই এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

চলমান রাজনৈতিক সংকটময় এমন পরিস্থিতিতেও এককভাবে কর্মসূচি পালনের ফলে আওয়ামী লীগ মিত্রহীন হয়ে পড়ছে কিনা, জনমনে এমন প্রশ্ন উঠছিল। যা আগামী নির্বাচনের মাঠে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে– এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির দলগুলোকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে– এমনটাই জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সূত্র।
অবশ্য ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করাসহ শরিকদের আস্থায় আনতে আগেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ জুলাই তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দীর্ঘ ১৬ মাস পর অনুষ্ঠিত জোটের শীর্ষ পর্যায়ের ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আগামী নির্বাচনেও ১৪ দলীয় জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানান। সেই সঙ্গে ১৪ দলের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির দলগুলো নিয়ে আরেকটি জোট গঠনের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সিদ্ধান্তের পর গত ২৭ জুলাই ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ৫৮ দলের জোট সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে আমির হোসেন আমুর বাসভবনে ১৪ দলের বৈঠকে বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন মোকাবিলায় জোটগতভাবে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত আসে।

২০০৫ সাল থেকে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের ধারায় রাজনীতি করে আসছে ১৪ দল। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোট। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দল শরিকদের ঠাঁই মেলেনি। এর আগের দুই মেয়াদের সরকারে থাকা মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতারাও মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। এমনকি ওই সময় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা ১৪ দল শরিকদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর অথবা বিরোধী দলে থেকে স্ব-স্ব দলীয় কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিজয় উদযাপনে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ এককভাবে বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ১৪ দল শরিকরা সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করলে নানা টানাপোড়েন দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতিতে ১৪ দলের কার্যক্রম ঢিমেতালে চলে আসছিল। এমন অবস্থায় প্রায় তিন বছর পর গত বছরের ১৫ মার্চ শীর্ষ নেতাদের এক দফা বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনায় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জোটের কার্যক্রমকে সক্রিয় করে তোলেন। গত ডিসেম্বর থেকে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামলে শরিক দলগুলোকে পাশে রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এই উপলব্ধি থেকেই ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের আরেক দফা বৈঠকের পর জোটকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো হয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন।

এ প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু সমকালকে বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য মোকাবিলায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ১৪ দল। বিএনপি আগামী নির্বাচন বানচালের জন্য সংবিধানবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেকেই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা নস্যাতের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে ১৪ দল।

১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্ত এবং সন্ত্রাস-সহিংসতা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ১৪ দল আগেও মাঠে ছিল; আগামীতেও মাঠে থাকবে। এ লক্ষ্য নিয়েই আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিন বছরের করোনা সংকটসহ নানা কারণে ১৪ দলের কার্যক্রমের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে তারা সব সময়ই মাঠে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও অধিক মাত্রায় সক্রিয় থাকবেন।