বিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। সোমবার (৯ই মে) তিনি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমনাও পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানা গেছে।

শ্রীলঙ্কার দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। বৈঠকে দেশের বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করতে তার ভাই অর্থাৎ দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি। এই অনুরোধ আমলে নিয়েই সোমবার পদত্যাগ করলেন মাহিন্দা।

অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা সংকটে জর্জরিত দেশটিতে অনেকদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে। এর অংশ হিসেবে সোমবার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সামনে সরকারবিরোধীরা বিক্ষোভ করছিল। একই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকশত সমর্থক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সরকারি বাসভবনের সামনে সমাবেশ করছিল। এরপর সেখান থেকে মিছিল করে গিয়ে প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সামনে অবস্থানরত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের অনুরোধ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তবে প্রেসিডেন্ট নিজেও পদত্যাগের চাপে রয়েছেন। কারণ শুরু থেকেই প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ।

প্রিলে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়। বিভিন্ন দেশের কাছে ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা নিজেকে ‘অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া’ ঘোষণা করে। তারপর থেকেই প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসার ইস্তফার দাবি জোরদার হয়েছিল এই দ্বীপরাষ্ট্রে। দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি কখনো এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েনি।

আন্তর্জাতিক ঋণ এবং সুদ মেটাতে চলতি বছরের মধ্যে অন্তত ৬৯০ কোটি ডলার ব্যয় করার কথা শ্রীলঙ্কার। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে জ্বালানি, কৃষিক্ষেত্রে সারের মতো একাধিক পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। মাসের পর মাস এই অবস্থার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে শ্রীলঙ্কার আমজনতা। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সাথে আন্দোলনে সামিল হয় কলকারখানায় লাখ লাখ কর্মী, গণপরিবহণ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত কর্মীরাও।