গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের প্রথম বছরেই তাক লাগিয়েছে সেতুটি। চালুর প্রথম বছরে দেশের অন্য সব সেতুর তুলনায় আয়ে এগিয়ে রয়েছে এ সেতু।

গত বছরের ২৬ জুন থেকে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে। ওইসব গাড়ির টোল থেকে আয় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আয় থেকে ৬২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে আয় হয়েছে ৭০৪ কোটি টাকা।

সফলতা, সক্ষমতা, সাহসের নাম পদ্মা সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের এক আবেগের নাম। দেশি বিদেশি নানা চক্রান্ত ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করেই পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর প্রায় ১০ বছরের শ্রমের চূড়ান্ত ফল আসে গেল বছরের ২৫শে জুন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিনই পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। তবে ওই দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হলে পরদিন থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সবশেস চলতি বছরের ২০শে এপ্রিল  থেকে আবার সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটেছে গত এক বছরে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালুর প্রথম বছরে গড়ে দৈনিক সাত হাজার গাড়ি চলাচল করবে এমন পূর্বাভাস ছিল। বাস্তবে চলাচল করছে ১৫-১৮ হাজার গাড়ি।

এমন অবস্থার মধ্যে আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এক বছর পূর্তি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কোনো বিশেষ আয়োজন রাখেনি সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পরের দিন ২৬ জুন থেকে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। এ সেতুর ফলে ঢাকা থেকে ২১ জেলায় যাতায়াতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে ওই সব জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথমবারের মতো বরিশাল অঞ্চলে পোশাক কারখানা নির্মাণ হচ্ছে। মোংলা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিও বেড়েছে। তবে গত এক বছরে দক্ষিণাঞ্চলে যে হারে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার আশা করা হয়েছিল, তা ওঠেনি।

পদ্মা সেতু দেশের সড়কপথে কানেক্টিভিটি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে সারা দেশের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা চালু হয়েছে। তিনি বলেন, এ সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্পায়ন হচ্ছে, পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, সেতুর কারণে কৃষিপণ্য অতি দ্রুত বাজারে পৌঁছে দিয়ে ভালো দর পাচ্ছেন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটক বেড়েছে। সেখানকার অর্থনীতিতেও চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।

যোগাযোগ খাতে বিপ্লব : পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখছে। চলতি জুন মাসের ২২ দিনে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৪৯টি গাড়ি পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে। এসব গাড়ি থেকে আয় হয়েছে ৪৮ কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ টাকা। এর আগে মে মাসে আয় হয় ৬৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকা। ওই মাসে গাড়ি চলাচল করেছে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৯টি।

অথচ বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর বছর ১৯৯৭-৯৮ সালে মাত্র ৯৯ লাখ টাকা আয় করে। পরের বছর ১৯৯৮-৯৯ সালে আয় করে ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে আয় হয়েছে ৭০৪ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে পদ্মা সেতু থেকে আয় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতেই ভোগান্তি : পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়ার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ঢাকার প্রবেশমুখের যানজট। ঢাকা থেকে বের হতে ও ফেরার সময় প্রবেশপথে যানজটের কবলে পড়তে হয়। পদ্মা সেতুর সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলেও ঢাকা থেকে বের হওয়া ও প্রবেশের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো লেন নেই। নেই বাইপাস সড়কও।

রাজধানীর চারদিকে বৃত্তাকার সড়ক (ইনার সার্কুলার রুট) নির্মাণের পরিকল্পা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গাবতলী-বাবুবাজার-কদমতলী অংশের সড়ক নির্মাণ আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। বিকল্প সড়ক না থাকায় ঢাকা থেকে পোস্তগোলা হয়ে পদ্মা সেতুমুখী গাড়ি চলাচল করে। এতে ওই এলাকায় প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।