দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে সরকার যে সুযোগ দিচ্ছে তাকে অনৈতিক ও পাচারকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার শামিল বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আইন পরিপন্থী এসব সুযোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচারকারীদের চিহ্নিত করে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার (৩০শে মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় টিআইবি।

বিগত সময়ে অর্থপাচারের মতো বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের প্রেক্ষাপটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার পদক্ষেপের কথা বলছে সরকার। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

টিআইবি বলছে, এ ধরনের সুযোগ দেওয়া শুধু অনৈতিক ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির সম্পূর্ণ বিপরীতই নয়, অসাংবিধানিকও। এ প্রক্রিয়ায় পাচার করা অর্থ ফেরত পাওয়ার যে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাস্তবে তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করার এসব উদ্যোগকে অর্থপাচারকারী তথা দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ট্যাক্স পরিশোধ করে বিদেশে পাচার করা অর্থ বৈধপথে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকবে আসন্ন বাজেটে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থপাচারকারীদের অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যা দেশের অর্থপাচার রোধে প্রণীত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।

হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও পাচারের অভিযোগে চলমান মামলাসমূহের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন তুলে বলেন, অর্থপাচারের মামলায় অভিযুক্তরাও এ সুযোগ নিতে চাইলে তাদের কি কোনো শাস্তি ভোগ করতে হবে না? এক্ষেত্রে সরকার কি তবে আইনের শাসনের পথ ফেলে আপসের পথে হাঁটবে? এসব বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা জরুরি।

বাজেটে বারবার ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগ দেওয়া অন্যায্য, অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক এবং একইসঙ্গে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীল’ নীতির বিপরীত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগে অর্থপাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবেন, অর্থপাচার আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আইন প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট ও পরীক্ষিত পথ পরিহার করে অর্থপাচারকারীদের অনৈতিক সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধ করা যাবে না। এতদিনে এটি স্পষ্ট যে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের পেশাগত উৎকর্ষ ও সৎ সাহসের পাশাপাশি সব পর্যায়ে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ছাড়া অর্থপাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। অর্থপাচাররোধে তাই দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।