দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা হয়রানি ও অপমানের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, বিষয়টি ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যেন পুলিশকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে আইজিপি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশ দেশের কল্যাণ, মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন‍্য কাজ করে। জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন‍্য পুলিশ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের সঙ্গে কিছু লোকজন দুর্ব্যবহার করছে—সর্বশেষ ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় এমন ঘটনা দেখা গেছে।

আইজিপি বলেন, দেশের নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তা, দেশের ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা কারও কারও দ্বারা হয়রানি ও অপমানের শিকার হচ্ছেন। এটা অত‍‍্যন্ত হতাশাজনক। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা পুলিশের দায়িত্ব পালনে সহায়তার জন‍্য এগিয়ে আসবেন, এই আহ্বান জানাই।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধনকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ. মো. সাজ্জাত আলীর কণ্ঠেও একই সুর শোনা যায়।

তিনি সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে—পুলিশ যখন কোনো একটি অরাজকতা ঠেকানো বা প্রতিহতের চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা এই ধরনের ব্যবহার আমার অফিসারদের সঙ্গে রাজপথে, রাস্তায় করেন, আমি তাদের অনুরোধ করব—আমার অফিসারদের সঙ্গে আপনারা এহেন আচরণ করবেন না। আমরা আপনাদের সঙ্গে রাস্তায় কোনো ক্ল্যাশে, কোনো সংঘাতে জড়িত হওয়ার জন্য নয়। আমরা আপনাদের সেবা দিতে চাই। আপনারা যে কাজটি করতে চাচ্ছেন সেটি করলে সমাজে, ঢাকা শহরে, দেশে একটা অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৫ আগস্টের পর ৮০ বছরের বৃদ্ধ লোককেও বাঁশের লাঠি নিয়ে মহল্লার মধ্যে পাহারা দিতে হয়েছে। আমার অফিসারদের মনোবল যদি ভেঙে যায়, তাহলে আপনাদের আবার এই বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে বাড়িঘরের পাহারা দিতে হবে।

স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে প্রায় ১৪শ’ ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগেরই প্রাণ ঝরে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার অনুগত পুলিশের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তখন বিক্ষোভ দমনে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন, যার কারণে পুরো পুলিশ বাহিনী জনতার মুখোমুখি হয়ে যায়। অবশ্য দমন-পীড়নে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই ৫ আগস্টের পর বিদেশে পালিয়ে যান।

হাসিনার সরকারের পতন ঘটলে বিক্ষুব্ধ জনতার আক্রমণের শিকার হয় পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক স্থাপনা। সংঘাতের সময় কিছু পুলিশ সদস্যেরও প্রাণহানি হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশজুড়ে পুলিশ ছিল কার্যত নিষ্ক্রিয়। তারপর নানা সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে, চেষ্টা চলছে তাদের মনোবল ফেরানোর। ইতোমধ্যে পুলিশের মনোগ্রামে পরিবর্তন দেখা গেছে, নতুন পোশাকও লেগেছে পুলিশ সদস্যদের গায়ে।