মস্কোভা ডুবে যাওয়ার অপমান সহজে হয়তো মানবে না রুশ বাহিনী— এমনটাই ধরে নিয়েছে ইউক্রেন। তাই প্রতিশোধের হামলা ঠেকাতে নিজেদের এখন তৈরি করে নিচ্ছে বলে জানালো কিয়েভ সরকার।

এদিকে মস্কোভার রেশ কাটতে দিচ্ছে না রুশ বাহিনী। হামলা চলছে দনেস্ক, লুহানস্ক ও খারকিভে। গত কয়েকদিনের হামলায় কিয়েভেই প্রায় ৯০০ জন বেসামরিক লোক নিহতের খবর জানালো শহরের পুলিশ প্রশাসন।

বিবিসি ও সিএনএন-এর খবরে জানা গেলো, স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) কিয়েভের পুলিশ বিভাগের প্রধান আন্দ্রেই নিয়েবিতভ জানিয়েছে, এ অঞ্চল থেকে রুশ বাহিনী চলে যাওয়ার পরই বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৯০০ জন বেসামরিক মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো পরীক্ষা করতে ফরেনসিক বিভাগেও পাঠানো হয়েছে।

নিয়েবিতভ আরও জানিয়েছেন, নিহতদের বেশিরভাগই গ্রামের সাধাসিধে লোকজন। তাদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এদিকে, দনেস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনীয় সামরিক প্রশাসনের প্রধান পাভলো কিরিলেঙ্কো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের অবস্থা ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে। আগের চেয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলাও বেড়েছে। তবে আক্রমণ প্রতিহত করা হচ্ছে।

খারকিভের জেনারেল প্রসিকিউটরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম-এর বার্তায় জানানো হয়েছে, সেখানে শুক্রবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাত মাসের এক শিশুসহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে মস্কোভার ক্রুদের নিয়ে এখনও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেমলিনের কাছ থেকে। ইউক্রেনের একটি অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, মস্কোভার ১৪ জন নাবিক সেভাস্তোপোলের ক্রিমিয়ান বন্দরে পৌঁছাতে পেরেছে। বাকি ৪৯৪ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।

রাশিয়াও দাবি করে আসছে যে, ক্রুজার ডুবে যাওয়ার আগেই নাবিকরা নিরাপদে সরে এসেছে।

তবে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, মস্কোভা ডুবে যাওয়ার সময় এর ক্যাপ্টেন আন্তন কুপরিনও মারা গেছেন।

মস্কো সিটি পার্লামেন্টের ডেপুটি আন্দ্রেই মেদভেদেভ তার এক পোস্টে বলেছেন, মস্কোভা ক্রুজারটিতে সম্ভবত পশ্চিমা মিসাইলের আঘাত হেনেছিল। তার মতে এ আক্রমণে ন্যাটোর হাত আছে এবং তা তদ্ন্ত করে দেখতে হবে।

তিনি এও লিখেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে লড়ছি না, ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। ন্যাটোর সহায়তাতেই আমাদের বাহিনীর ওপর আঘাত হানা হচ্ছে।’ সেই সঙ্গে মস্কোভা যে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অতটা আধুনিক ছিল না, সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি।

মোটকথা, মস্কোভার ডুবে যাওয়ায় এখন দুটো বিষয় ঘটতে পারে। প্রথমত, আঁতে ঘা লাগায় রুশ বাহিনী আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আবার দেখা গেলা হয়তো, এ জাহাজের সঙ্গে রুশ বাহিনীর মনোবলও তলিয়ে গেছে।

যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ক্ষতিকে খুব একটা প্রভাব বিস্তারকারী বলে দাবি করা হচ্ছে না।

অবশ্য মস্কোভার পরিণতি নিয়ে খুব একটা আত্মতুষ্টিতেও ভুগছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, পুতিন যেহেতু ইউক্রেনের জনগণের জীবনের দাম দিচ্ছেন না, তাই তিনি যেকোনও মুহূর্তে নিউক্লিয়ার কিংবা রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ে বসতে পারেন।

জেলেনস্কির এমন দুশ্চিন্তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিআইএ’র পরিচালক বিল বার্নস গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, পুতিনের নিউক্লিয়ার অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাশিয়ার প্রস্তুতির কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।