আইন অনুযায়ী প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (০২ জুলাই) এ নিয়ে এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ আদেশের আগে হাইকোর্ট বলেন, দুর্নীতি উন্নয়ন ও সুশাসনের অন্তরায়, তাই যেকোনো মূল্যে এটি থামাতেই হবে। শুধু সরকার নয়, জনগণকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী একেএম ফজুলল হক।
রুলে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের অবৈধ সম্পদ অর্জন রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন ও নীতি করতে বিবাদীদের ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং কথিত নিষ্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি হবে না এবং সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে সময়ে আপডেট করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
সোমবার (১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন।
রিট দায়েরের পর আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব যেন নেওয়া হয় এবং সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়, তার নির্দেশনা চেয়ে রিট দাখিল করেছি। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের আয়ের কিছু অফিসিয়ালের বিপুল পরিমাণে সম্পদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। যে অফিসারই হোক না কেন তিনি কীভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেন, সে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। কারণ সরকারের একটি রুলস আছে। ওই রুলস অনুযায়ী, কোনো সরকারি অফিসার পূর্বানুমতি ছাড়া একটি বিল্ডিংও নির্মাণ করতে পারেন না। ইনভেস্ট করতে পারেন না। তিনি আইন থাকার পরেও কীভাবে এত বিপুল সম্পত্তি অর্জন করলেন। চাকরির প্রবেশকালে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে হবে এবং প্রতিবছর কত বাড়ল বা কমল তার বিবরণী দাখিল করার আইন রয়েছে। পরবর্তী তা সংশোধন করে প্রতি পাঁচ বছর পর পর দাখিল করার বিধান করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ ২০০৮ সালে কিছু কর্মকর্তা দাখিল করেছিলেন। ২০০৮ সালের পরে সরকার চাইলেও কর্মকর্তারা সেটা দেননি। আমরা বলেছি, আইনটা প্রতিপালন করার জন্য।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ১৩ বিধিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলংকারাদিসহ স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা করবেন। প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করবেন।