অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দ্রুত শ্বেতপত্র প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এটি নিয়ে কী করা হবে।
আজ রোববার (৩ নভেম্বর) শ্বেতপত্র প্রণয়ণ কমিটির সাথে বৈঠকে এসব অভিযোগ তুলে ধরেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অন্তর্বতী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদন ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বিগত সরকারের আমলে অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নানা খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ৮৫ জন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করে কমিটি। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে চার ঘন্টার এই বৈঠকে ৩২ জন সচিব এবং সিনিয়র সচিব অংশ নেয়।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক চাপের কাছে সম্পূর্ণরুপে জিম্মি ছিলো আমলাতন্ত্র। উন্নয়ন বয়ানের বাইরে কোন কিছু করার উপায় ছিলোনা। সে কারণে স্বাধীন ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের পেশাগত নানা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমলাদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যত্যয় ঘটাতে পেরেছেন। তার জন্য সেই আমলাদের পেশাগত ক্ষতি হয়েছে। পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। সিনিয়র আমলারা দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব হিসেবে আখ্যা দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবচ্ছেদ করেছেন, এটাকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করেন তিনি।
আমলাদের পেশাগত সমিতিগুলো কেন সুরক্ষা দিতে পারেনি, শ্বেতপত্র কমিটির এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেছেন, আমলাতন্ত্রের পেশাগত কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সংগঠনগুলোর দলীয়করণ করা হয়েছিল। সংগঠনের নেতারা সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে যৌথভাবে ভূমিকা পালনের অবকাশ ছিল না।
প্রকল্পের মাধ্যমে যে সরকারি অর্থের লুণ্ঠন হয়েছে, তাতে উন্নয়ন প্রশাসনের কী ভূমিকা ছিল- শ্বেতপত্র কমিটির এ প্রশ্নের উত্তরে আমলারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইপ্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে আবার ইচ্ছা করে দুর্বল প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্প ভুলভাবে টেকসই দেখানো হয়েছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংযোগের কারণে দুর্নীতি হয়েছে।
বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যেমন হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা। ব্যাংকব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।