করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রেকর্ড গড়েছেন প্রবাসীরা। সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে।
এ অর্থবছরে আসা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৮৯ শতাংশই এসেছে ১০টি দেশ থেকে। আর এবারই প্রথম আমিরাতের চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
যে ১০ দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে সে দেশগুলো হলো- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) যার পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে গেল অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে বেশি ভূমিকা পালন করছেন মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা ও ইউরোপের দেশে থাকা প্রবাসীরা।
বাংলাদেশের প্রবাসীদের বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি সৌদিতে কর্মরত আছেন।
তথ্য বলছে, বরাবরের মতো গেল অর্থবছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫৭২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া দেশটি থেকে গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সৌদি থেকে রেমিট্যান্স আসে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলার।
এদিকে আগের বছরগুলোতে সবসময় রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে সৌদি আরবের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে থাকত সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলতি অর্থবছরে আমিরাতকে টপকে দ্বিতীয়তে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে টাকা পাঠানো সহজ হয়েছে। এছাড়া বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি মহামারিতে দেশে স্বজনদের কথা বিবেচনা করে প্রবাসীরা আগের তুলনায় বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। গেল অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৪০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
তৃতীয় শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। দেশটি থেকে এসেছে ২৪৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২০২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ৫ম অবস্থানের দেশ মালয়েশিয়া থেকে পঠিয়েছে ২০০ কোটি ২৩ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে এসেছে ১৮৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, ওমান ১৫৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, কাতার থেকে এসেছে ১৪৫ কোটি ডলার। এছাড়া ইতালি থেকে এসেছে ৮১ কোটি ডলার এবং সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসেবে ওই অংক ছিল এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ, কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
এদিকে, রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। জুন মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় চার হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।