সারাবিশ্বে ফুসফুসের ক্যান্সারের পর প্রস্টেট ক্যান্সারেই সবচেয়ে বেশি পুরুষের মৃত্যু হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারকেই প্রস্টেট ক্যান্সার বলে। পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। কিছু সাবধানতা ও সচেতন হলেই এই ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকা যায়।

প্রোস্টেট কি ?

শুধুমাত্র পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মুত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালী বের হয়েছে সেটির চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয় সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এই তরল পদার্থের মিশ্রণ।

প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণঃ

পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার খুবই সাধারন। প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্যে কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে তখনই ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের পর পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর চাইতে কম বয়সেও প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু সেটা সচরাচর দেখা যায় না। বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততোই বেড়ে যায়। পরিবারের কারো যদি (ভাই কিংবা বাবার) প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলেও ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।

প্রোস্টেট ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় এখনো সম্ভব হয়নি, তবে কতগুলো বিষয় লক্ষ করা গেছে যেগুলো প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলোকে বিপদের কারণ হিসেবে মনে করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-

*বয়স যত বেশি প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বেশি।

*প্রোস্টেট ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস৷

*প্রোস্টেট ক্যান্সারের কিছু জেনেটিক কারণও আজকাল আলোচিত হচ্ছে।

*প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ ও এ রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করা।

*খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চর্বি ও আমিষ খাবারের সংযোজন। সিগারেট, তামাক সেবন।

*পুরুষ হরমোন (টেস্টোস্টেরনের) উপস্থিতি প্রোস্টেট ক্যান্সার দ্রুত বৃদ্ধি ও বিস্তারে সাহায্য করে থাকে।

 

প্রোস্টেট ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ

» প্রোস্টেট ক্যান্সারে মূত্রাশয় ও মূত্রনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

» প্রস্রাবের রঙে পরিবর্তন আসে। যা প্রোস্টেট ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ।

» প্রোস্টেটে টিউমার হলে মূত্রনালিতে চাপ দেয় ও মূত্রত্যাগেও সমস্যা হয়।

» প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় ফলে মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি হতে পারে না।

» রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং ব্যথা, জ্বালাপোড়া ভাব থাকে।

» প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে ইনফেকশনও অনেক বেশি হয়।

» কোমরেও খুব ব্যথা হয় যা সহজে যায় না।

» বীর্যপাতের সময়েও ব্যথা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স ৫০ পার হলেই এই প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। এই অসুখের শঙ্কা বাড়ে। পিএসএ টেস্ট বা প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।

সাধারণত রক্তে পিএসএ-র মাত্রা ১ থেকে ৪-এর মধ্যেই থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তা ৪ এর বেশি। তবে ৪ এর বেশি মানেই ক্যা্‌সার নয়। তখন ডিজিটাল রেক্টাল টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই টেস্টে যদি দেখা যায় যেকোনো রকম স্ফীতি রয়েছে তখন বায়োপসি করানো হয়।

এই ক্যান্সার যত দ্রুত ধরা পড়ে ততই কিন্তু ভালো। হঠাৎ মূত্রের গতি কমে গেলে, জ্বালাপোড়া ভাব থাকলে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে তলপেটে আর মেরুদণ্ডে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কম বয়সীদের ক্ষেত্রে সঙ্গমের সময় ব্যথা, বীর্যের সঙ্গে রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত হলেও কিন্তু সাবধান হতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।