ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে যে ২০২২ সালের ফুলব্রাইট স্কলার প্রোগ্রামের জন্য আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। এ বছর ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে স্কলার/মেধাবীদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক শিক্ষা সেমিস্টার থেকে শুরু করে একটি পুরো শিক্ষাবর্ষের জন্য পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা পরিচালনা করার সুযোগ দিবে।
এই প্রোগ্রামের জন্য যারা নির্বাচিত হবেন, তারা ছয় থেকে নয় মাসের গবেষণা করার কিংবা পড়ানোর অনুদান পাবেন, যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। অভিজ্ঞ বাংলাদেশী পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পেশাজীবী যাদের ১০ বছর কিংবা আরো বেশি সময়ের পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদেরকে আবেদন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যাচ্ছে। দূতাবাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, দূরশিক্ষণ, শিক্ষা প্রযুক্তি, জনস্বাস্থ্য, জীব বিজ্ঞান, ফার্মেসি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বসহকারে জ্ঞানের সকল শাখায় বিস্তৃত বিষয়ে প্রস্তাবনা আহ্বান করছে।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে পেশাগতভাবে কাজ করার জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই ইংরেজি ভাষার উপর চমত্কার দক্ষতা ও দখল থাকতে হবে।
পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের এই কর্মসূচিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
রিসার্চ গ্রান্ট (গবেষণা অনুদান): ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার প্রোগ্রামের অধীনে জ্ঞানের সকল শাখার মেধাবীদের প্রাথমিকভাবে ছয় থেকে নয় মাসের গবেষণা অনুদান দেয়া হয়। যার দ্বারা তারা প্রতিষ্ঠান বা কর্মসূচি উন্নয়ন সম্পর্কিত চাহিদা নিরূপণ ও গবেষণা করেন, অনুষদের উন্নয়নে মাধ্যমিক-উত্তর প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক ও প্রশিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করেন, এবং একাডেমিক পাঠ্যক্রম বা শিক্ষাগত উপকরণ তৈরি এবং/অথবা মূল্যায়ন করার কাজ করেন।
লেকচারিং গ্রান্ট (শিক্ষকতার জন্য অনুদান): এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশী শিক্ষক ও মেধাবী/পন্ডিত ব্যক্তি যারা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে/শিক্ষকতায় আগ্রহী তাদেরকে এক থেকে দুই সেমিস্টারে শিক্ষকতার জন্য অনুদান দেয়া হয়। যারা শিক্ষকতার জন্য অনুদান পেতে আগ্রহী তাদের অবশ্যই শিক্ষদানের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেখানে লেকচার দেওয়ার নিশ্চিত আমন্ত্রণ থাকলে তবেই ফুলব্রাইট অনুদানের জন্য বিবেচনা করা হবে।
এই প্রোগ্রাম চলাকালে একজন ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার যুক্তরাষ্ট্রে নিজেকে উদ্দীপক/ভালো লাগার বিষয়গুলোর সাথে যুক্ত রাখার জন্য, অন্যান্য ফুলব্রাইটদের সাথে দেখা করার জন্য, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক নেটওয়ার্ককে প্রসারিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শিক্ষার বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতা নিতে নিম্নলিখিত সুযোগগুলোকে তারা কাজে লাগাতে পারেন।
আউটরিচ লেকচারিং ফান্ড: আউটরিচ লেকচারিং ফান্ড (ওএলএফ) মূলত হোস্ট বা আমন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন করে যাতে তারা ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার প্রোগ্রামের আওতায় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শিক্ষাবিদদের ভার্চুয়ালি স্বল্পমেয়াদে শিক্ষাদান/লেকচার কার্যক্রমে যুক্ত করতে পারে। ওএলএফ কার্যক্রমটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আমন্ত্রণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভিজিটিং স্কলার উভয়ে লেকচারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতে পারেন; যার মাধ্যমে একদিকে শিক্ষা বিষয়কে যেমন তুলে ধরা যায় তেমনি সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াটাও সমৃদ্ধ হয়। এছাড়াও ওএলএফ বর্তমানে ফুলব্রাইট প্রোগ্রামে কম পরিচিত প্রতিষ্ঠানের সাথে ভবিষ্যতে সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করে। এই ধরনের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যান্যদের সাথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সংখ্যালঘুদের জন্য প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি কলেজ, লিবারেল আর্টস কলেজ, নারীদের কলেজ ও আর্ট কলেজ এবং ভৌগোলিকভাবে কম প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ।
এনরিচমেন্ট প্রোগ্রাম: এনরিচমেন্ট প্রোগ্রাম ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের আয়োজন করে যা তাদের বিনিময় কার্যক্রমের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। এনরিচমেন্ট প্রোগ্রাম স্কলারদের বিনিময় কার্যক্রমের জটিলতা/দুর্বোধ্যতাকে বুঝতে, ফুলব্রাইট স্কলারদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে, তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে সহায়তা করে। এই ধরনের কর্মকান্ডগুলো ফুলব্রাইট স্কলারদের আমেরিকাকে আরো ভালোভাবে বুঝতে এবং ফুলব্রাইট কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমেরিকান জনগণের সাথে অন্য দেশগুলোর জনগণের পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।
গত ৫০ বছরে ১৫৮ জন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ/স্কলার এই ফ্লাগশিপ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রাক্তন ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলারের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন পেশাজীবী এবং আরো অনেক বিষয়ের পন্ডিত ব্যক্তিগণ। বিশিষ্ট ও বিখ্যাত বাংলাদেশী প্রাক্তন ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলারের মধ্যে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি বিশ্বের দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের জন্য যার জীবনব্যাপী অবদান তাকে তার প্রজন্মের অন্যতম খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদে পরিণত করেছে এবং তিনি ২০০৬ সালে (গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে) “তৃণমূল থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তাদের অবদানের জন্য” নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।
আবেদন বিষয়ক তথ্য ও সময়সীমা:
আবেদন করার শেষ সময় শনিবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২১, ১১:৫৯ মিনিট ইটি (ওয়াশিংটন ডিসি সময়)
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য : https://apply.iie.org/fvsp2022/
আবেদন করার বিস্তারিত নির্দেশাবলীর জন্য দেখুন: https://bd.usembassy.gov/26950/
আরো তথ্য জানতে কালচারাল অ্যাফেয়ার্স স্পেশালিস্ট এর সাথে এই ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করুন: SultanaR1@state.gov.