কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে হাওরের পানিতে ডুবে ঢাকার দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার গুনধর উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণের বড় হাওরে পাঁচ বন্ধু মিলে গোসল করতে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে, ঢাকা কলেজের ফিজিক্স বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শরফুদ্দিন রাফু (২৪) এবং একই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে, মুন্সিগঞ্জ পলিটেনিকের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র লিমন ইসলাম (২৩)। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। রাফুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীতে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আড়ংয়ের কর্মচারী সায়েম উদ্দিনের ছেলে তৌকিরের বিয়ে ছিল গত সোমবার। বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তৌকিরদের পাশের কদিমমাইজহাটি গ্রামে তার মামা মানিক মিয়ার বাড়িতে। এ উপলক্ষ্যে বিয়ের আগের দিন রোববার তার পাঁচ বন্ধু রাফু, লিমন, রাফি, জুনায়েদ ও রকি ঢাকা থেকে কদিমমাইজহাটিতে বেড়াতে আসেন। মঙ্গলবার ছিল তৌকিরের বৌভাত অনুষ্ঠান। সকালের নাস্তা সেরে বর তৌকির ও তার পাঁচ বন্ধু রাফু, লিমন, রাফি, জুনায়েদ ও রকি বিয়ে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে ফুটবল খেলেন। পরে ফুটবল নিয়েই তারা পতিত জমির অদূরে হাওরের নতুন পানিতে গোসল করতে যান।

গোসলের একপর্যায়ে হাওরের ডুবো সড়ক থেকে পা পিছলে রাফু, লিমন ও তৌকির খাদে পড়ে যান। সাঁতার না জানায় কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হাওরের পানিতে তলিয়ে যান। এ সময় অন্য তিন বন্ধু সাঁতরে পানিতে তলিয়ে যাওয়া তিন বন্ধু ও এলাকাবাসী মিলে রাফু, লিমন ও তৌকিরকে উদ্ধার করে। কিন্তু ঘটনাস্থলেই লিমনের মৃত্যু হয়। এছাড়া রাফু ও তৌকির এই দু’জনকে দ্রুত কিশোরগঞ্জে আনার পর রাফুকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তৌকিরকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে রাফুকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে বলে হাসপাতালটিতে নিয়ে আসা তার তিন বন্ধু রাফি, জুনায়েদ ও রকি অভিযোগ করেন।

তারা বলেন, হাসপাতালে আনার পর পরই যদি রাফুকে অক্সিজেন দেয়া হতো, তাহলে তিনি হয়তো বেঁচে যেতেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফুর মৃত্যুর পর তিন বন্ধুই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত মেডি্যিাল অফিসার সুমন সেন বলেন, আমি হাসপাতালে এসে দু’জনকেই মৃত পেয়েছি। হাসপাতালে আনার আগেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে এনে ভর্তি করার পর রাফু নামের একজনের মৃত্যু হয়।

করিমগঞ্জ থানার ওসি মো: শামছুল আলম সিদ্দিকী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।