বৃষ্টি কমে আসায় নদ-নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। ফলে আগামী কয়েক দিনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছে আবহাওয়া বিভাগ ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে স্মরণকালের নজিরবিহীনবন্যায় দেশের ১১ জেলার ৫০ লাখ মানুষ পানি বন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলছে সরকারের তথ্য। মারা গেছেন ১৮ জন। আর ব্র্যাকের হিসাব বলছে এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৪৫ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। খবর ডয়চে ভেলের।
ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার দুর্গম অনেক গ্রামে পৌঁছাতে পারেনি উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীরা। পানিবন্দি মানুষ খাবার ও পানীয় জলের সংকটে আছে। অনেক এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তার সাথে পানি কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ, মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের বাইরে।
ওপর থেকে দেখা ফেনী জেলায় বন্যার ভয়াবহ চিত্র। জনবহুল এসব এলাকা এখন শুধুই অথই পানি স্থির হয়ে আছে।
আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় ডুবে আছে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা। রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে পানির নিচে। গাছ পড়ে আছ সড়কে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহায়তায় পরিস্কার করে ত্রাণের গাড়ী নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।
সোনাগাজী ও দাগনভূঞা ছাড়া ফেনীতে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া থেকে পানি কিছুটা নেমেছে। তবে নতুন করে আরও কয়েকটি ইউনিয়ন নিমজ্জিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফেনী জেলা প্রশাসন। ফেনী সদর, ফুলগাজী ও সোনাগাজীর মানুষের ত্রাণের বেশি প্রয়োাজন। ফেনী সদর ও সোনাগাজী-দাগনভূঞাসহ ৬ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বহু মানুষ বাসাবাড়ির ছাদ, উঁচু রাস্তায় ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। খাবার ও পানের পানির তীব্র সংকটে আছে তারা।
বানের জলে তলিয়ে আছে নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়িসহ সাত উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গত এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। যোগযোগ বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকায় অসহায় অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।
কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙা পানিতে বেড়েছে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়ার পানি। তবে অন্য এলাকার পানি কমে যাওয়া, নৌকা ও ট্রলারের স্বল্পতায় দূর্গত মানুষের কাছে ত্রান পৌছানো কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রশাসন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে আসলেও দূর্গত মানুষের কাছে পৌছাতে হিমসিম খাচ্ছে। এখনো জেলায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজকের অবস্থাও আগের মতো। সড়কে আটকে আছে ত্রাণবাহী যানবাহন। সহায়তা পৌছাতে বেগ পেতে হচ্ছে সহায়তাকারী সংগঠনগুলোকে।
কক্সবাজারের রামু, সদর, চকরিয়া ও ঈদগাঁওতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে বন্যার ক্ষত চিহ্ন। পানি কমায় বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে পানিতে ভেসে গেছে বিভিন্ন সামগ্রী, ভেঙ্গেছে ঘর, নষ্ট হয়ে গেছে আসবাপত্র।