লন্ডনে ব্রিটিশ–বাংলাদেশি স্কুলশিক্ষিকা সাবিনা নেসা (২৮) হত্যাকাণ্ডে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ এনেছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। কোসি সেলামাজ নামের ওই ব্যক্তি আলবেনিয়া থেকে এসে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন।

বিবিসি, টেলিগ্রাফসহ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ বছর বয়সী সেলামাজ একটি গ্যারেজে কাজ করেন। এর আগে ডোমিনোর পিৎজা সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। সেলামাজের বিরুদ্ধে পূর্ব লন্ডনের কিডব্রুকের পার্কের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সাবিনা নেসার ওপর সহিংস হামলা ও তাঁকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ফৌজদারি আদালত ওল্ড বেইলিতে এই মামলার শুনানি হয়। সেখানে প্রসিকিউটর অ্যালিসন মর্গ্যান কিউসি বলেন, কী কারণে সাবিনা নেসাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। তবে ‘চরম সহিংসতার’ মধ্য দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হামলাকারী দুই ফুট লম্বা অস্ত্র দিয়ে সাবিনা নেসাকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। পরে অচেতন অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন।

এই হত্যা মামলায় প্রমাণ হিসেবে আদালতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, অটোমেটিক নাম্বার প্লেট রেকগনিশন (এনপিআর) এবং ফোন রেকর্ড উপস্থাপন করা হবে।
সাবিনা নেসা দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের লিউশামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দাওরাই গ্রামে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে সাবিনা নেসা দক্ষিণ–পূর্ব লন্ডনের গ্রিনউইচের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি পাঁচ মিনিট দূরত্বের পেগলের স্কয়ারে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পরদিন নিকটবর্তী কিডব্রুক এলাকার একটি পার্কের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর পেগলের স্কয়ারে সাবিনা নেসার স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। সেখানে কয়েক শ ব্রিটিশ নাগরিক সমবেত হয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে সাবিনার বোন জেবিনা ইয়াসমিন ইসলাম বলেন, ‘এ মুহূর্তে একটি পরিবার হিসেবে আমরা কেমন মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তা বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। আমরা কখনো ভাবিনি এ রকম কিছু আমাদের সঙ্গে ঘটতে পারে।’

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাকারী সাবিনা নেসার পরিচিত ছিলেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার লন্ডনের এইচএমপি ওরমউড স্কার্বস কারাগার থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। একজন দোভাষীর মাধ্যমে তিনি শুধু তাঁর নাম ও জন্ম তারিখ নিশ্চিত করেন।

সেলামাজের জামিনের জন্য কোনো আবেদন করা হয়নি। আগামী ৯ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন আদালত।

গত রোববার ইস্ট সাসেক্স থেকে সেলামাজেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। তাঁর বাসা থেকে আধা মাইল দূরের একটি আবাসিক এলাকার রাস্তা থেকে একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার সেলামাজেকে উইলডেন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হয়।

সেলামাজে ও তাঁর দুই ভাইবোন আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানার কাছের ছোট শহর এলবাসানে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছরের বেশি সময় আগে সেলামাজ আলবেনিয়া ছেড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।