ইংলাণ্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের বাঁচানোর ম্যাচে জিততে হলে রেকর্ড ৩২৭ রান তাড়া করতে হতো বাংলাদেশকে। তবে বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানে থেমে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। এতে ১৩২ রানের বড় জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বল্প পুঁজি নিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালাতে পারলেও সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে আজ তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। ব্যাটিং-বোলিং কিংবা ফিল্ডিং তিন বিভাগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশে। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০তে পিছিয়ে পড়ল টাইগাররা।
সিরিজ জয়ের মিশনে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে জেসন রয় ও জস বাটলারের ব্যাটে ৩২৭ রানের লক্ষ্য দেয় ইংল্যান্ড। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের ২.২ ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন বাংলাদেশের তিন টপ অর্ডার ব্যাটার। প্রথম ওভারে স্যাম কারানের চতুর্থ বলে লিটন (১ বলে ০) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন। এর পরের বলে শান্তও মারেন গোল্ডেন ডাক (১ বলে ০)। তৃতীয় ওভারে মুশফিকুর রহিম ফিরে যান চার নান করে।
এরপর কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়েছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। তবে ধীরগতির ইনিংসের পর ২১তম ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার তামিম। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে আশার আলো দেখানো সাকিব নিজের অর্ধশতক পূরণ করে ২৮তম ওভারে সাজঘরে ফিরেন। আদিল রশিদের বলে এ দুজনের ৩৪ রানের জুটি ভাঙে। ব্যক্তিগত ৫৮ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
এরপর উইকেটে আসে আফিফ হোসেনকে সাথে নিয়ে রান চাপ কমাতে থাকেন রিয়াদ। তবে আফিফের ঝড় ইনিংস বেশিক্ষণ টিকে থাকেনি ২ চার ও ১ ছয়ে ২৩ রান করে সাজঘরে ফেরন তিনি। পরে ৪৯ বলে ৩২ করে দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রিয়াদও। শেষ দিকে তাসকিনের ক্যামিং ইনিংস কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে টাইগার ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত সব উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে টাইগাররা। ইংলিশদের হয়ে বল হাতে ৪টি করে উইকেট নেন স্যাম কারান এবং আদিল রশিদ।
এর আগে আজ (শুক্রবার) দুপুর ১২টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ টস জিতে ইংল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুরুতে দুই প্রান্ত থেকে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন তামিম। তবে সাকিব আল হাসান আর তাইজুল ইসলাম প্রথম চার ওভারে তেমন বিপদে ফেলতে পারেনি ইংল্যান্ডকে।
সপ্তম ওভারে এসে বাংলাদেশ সাফল্য পায় তাসকিন আহমেদের হাত ধরে। তাসকিনের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে সাজ ঘরে পিরেন ফিল সল্ট (৭)। ২৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর ডেভিড মালানকে নিয়ে ৫৪ বলে ৫৮ রানের ঝোড়ো জুটি গড়েন জেসন রয়। আগের ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডকে জেতানো মালানকে ভয়ংকর হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজের ঘুর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মালান, ফেরেন ১১ করে। এরপর জেমস ভিন্সকে দ্রুতই সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল ইসলাম। ভিন্স ৫ করে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হন।
টপঅর্ডারের চার ব্যাটারের মধ্যে তিনজনকেই ইনিংস বড় করতে না দিলেও ওপেনার জেসন রয় ঠিকই রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন। দারুণ ব্যাটিং করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরিও তুলে নেন ইংল্যান্ডের ডানহাতি এই ব্যাটার।
পরে সাকিবের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন রয়। এর আগে অবশ্য ১৮ চার ও ১ ছক্কায় ১২৪ বলে ১৩২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। মাঝে উইল জ্যাকসকেও ফিরতে হয় দ্রুতই। তাকে ফেরান পেসার তাসকিন আহমেদ।
এই পেসারের বল লেগে টেনে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন সাকিবের হাতে। ৪ বল খেলে কেবল ১ রান করেন তিনি। রয়ের ফেরার পর বাংলাদেশের জন্য বড় দুশ্চিন্তা হয়েছিলেন জস বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক যাচ্ছিল সেঞ্চুরির দিকেও।
মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের বলে নিজেই দারুণ এক ক্যাচ নিলে বাটলারকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় এর আগে ৬৪ বলে ৭৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর দলকে টেনে নেন মঈন আলি ও শ্যাম কারান। তাদের কল্যাণেই তিনশ ছাড়িয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪২ রান করে মঈন ফিরলেও শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন স্যাম কারান। তিনি ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯ বলে করেন ৩৩ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় সবাই-ই ছিলেন খরুচে। ছয়ের নিচে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন কেবল তাইজুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৫৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি। ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৭৩ রান দিয়ে দুই ও সাকিব ৬৪ রান দিয়ে নেন এক উইকেট।