বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) দোষর হলো একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করেছে সেসব যুদ্ধাপরাধীরা। বিএনপি হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী, মানিলন্ডারিং ও এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীর দল। আর তাদের সঙ্গে জুড়েছে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত। তারা নির্বাচন চায় না, নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর শুধু যে একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেছে তা নয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছিল, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছিল। শুধু তাই নয়, জয় বাংলা স্লোগান, ৭ মার্চের ভাষণ এমনকি জাতির পিতার ছবিও নিষিদ্ধ করেছিল। ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভাগ্য না গড়ে নিজেদের ভাগ্য গড়েছিল বিএনপি-জামায়াত। দেশের মানুষ তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

বরিশালের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সড়কব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয়লেনের রাস্তা করে দেব। এই বরিশালে আর কষ্ট থাকবে না। বরিশাল বিভাগ ছিল অন্ধকার। আওয়ামী লীগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। আট লাখ ৪১ হাজার ৬২৩ জন হতদরিদ্রকে বিনামূল্যে ঘর দিয়েছে। এই বাংলাদেশে কেউ হতদরিদ্র থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট দেশ হবে। তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে দেশকে স্মার্ট দেশ করব। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আজকে ছয় লাখ ৮০ হাজার ফিল্যান্সার ঘরে বসে আয় করছে। এজন্য ১০৯টি আইটি পার্ক করেছি। প্রত্যেক স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করেছি। ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় নিয়েছি। ভবিষ্যতে এই গ্যাস বরিশালের শিল্পাঞ্চলে দেওয়া হবে।

এসময় শেখ হাসিনা জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা ৭ তারিখে সবাই সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন। মার্কাটা কী, নৌকা মার্কা। নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। এই নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।

বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বিএনপি ছেড়ে যাওয়া শাহজাহান ওমরকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসী দল ছেড়ে সে নৌকায় এসেছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল ১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন, আবদুল হাফিজ মল্লিক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ-ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী-যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, জাতীয় পাটির (মঞ্জু) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, শাজাহান ওমর বীর উত্তম, আওয়ামী লীগের দফতর সস্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বরিশাল মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গির, সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশের কয়েকটি জেলায় জনসভা করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এদিন বরিশালে যান শেখ হাসিনা। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।