বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে সরে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপি সহিংসতার মধ্য দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে দেশে শান্তি বজায়  রাখতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।

বুধবার (১৯শে জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি ও জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসেনি, গতকালের সংঘর্ষ তারই প্রমাণ বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও শান্তি  ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করা হয়েছে। বিএনপির এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করা। যেটি গতকাল আবার স্পষ্ট হয়েছে। তারা দেশের ৯টি জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মিরপুর বাংলা কলেজে ছাত্রলীগের এক নেতার বাইক জ্বালিয়ে দিয়েছে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে। তারা পৌরভবনেও হামলা চালিয়েছে। বগুড়ায় সাতমাথা মোড়ে বিএনপির যাওয়ার কোনও অনুমতি ছিল না। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে বাধ্য হয়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। লক্ষ্মীপুরে সামাদ অ্যাকাডেমির সামনে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষকে  উসকানি দিয়েছে। এভাবে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এটিই। আজ আবারও তারা পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। একইসঙ্গে আমাদের উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, দলটির বিরুদ্ধে আওয়ামী চেতনার পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হচ্ছে রাষ্ট্রের। তারা কোনও দলের না। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যে দলেরই হোক, কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে— তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বগুড়াতে বিএনপির যেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না, সেখানে তারা যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা তো লিখিত অনুমতি নিয়েছে এবং কোন কোন রুট ব্যবহার করবে, সেটি তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি না করে ভিন্ন রুট ব্যবহার করে এবং যেখানে অনুমতি নেই, সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করে, পুলিশকে তখন ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’

হিরো আলমের ওপর মারধরের ঘটনায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বা অ্যামনেস্টির টুইটকে জাতিসংঘের ও অ্যামনেস্টির বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি যে, জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধি কিংবা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টুইটকে জাতিসংঘের ও অ্যামনেস্টির বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে যেটি যা না, সেটিকে তার হিসেবে প্রচার কিংবা সংবাদ তৈরি করা, দিস ইজ ম্যালইনফরমেশন, অপসাংবাদিকতা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘একটি টুইট জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না, তাও এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির— হেডকোয়ার্টারের কারও টুইট না। এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির একটি টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি বা বক্তব্য বলে প্রচার করা সমীচীন না। এটা ম্যালইনফরমেশন, অপসাংবাদিকতা।’ ‘তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বিনীত অনুরোধ জানাবো— এ ধরনের যেটি যা না, সেটি তা বলে প্রচার করা থেকে আপনারা বিরত থাকুন’, বলেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমি যদি একটি টুইট করি বা স্ট্যাটাস দিই, সেটি কি সরকারের বক্তব্য হবে? আমি তো তথ্যমন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কাজেই জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধি কিংবা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি টুইটকে তাদের বিবৃতি কিংবা উদ্বেগ হিসেবে প্রচার করা সমীচীন না, অপসাংবাদিকতার পরিচয়। অনুরোধ করবো, এগুলো থেকে সবাইকে বিরত থাকতে, সতর্ক থাকতে।’

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা পরিচালনার উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করা। এই হামলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। অনুচিত। আমরা গতকালই এর নিন্দা জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এটি করেছেন, তারা সরকারি দলের ওপর কালিমা লেপন করতে চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটি করেছেন। সরকার দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তদন্ত চলছে, সেখানে কাদের ইন্ধন ছিল, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। কিংবা এই ঘটনা ঘটাতে যে প্রার্থীকে হেনস্থা করা হয়েছে, তার পক্ষ থেকে উসকানি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। সেটি নিয়ে তো সেখানকার জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কোনও টুইট দেখলাম না। বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই এভাবে টুইট করা বা কিছু একটা বলা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতি নাক গলানোর শামিল।’

গেল কয়েক মাস ধরে মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৎপরতা এবং গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি যেভাবে মাঠে নামছে, এর মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘরের বিষয়ে নাক গলাতে আমরাই তাদের উৎসাহ দিই। আমরাই তাদের হাতেপায়ে ধরে, তাদের আসতে উৎসাহ দিই। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করি। এ জন্য আমরাই দায়ী। এভাবে যারা দেশের বিষয়-আশয় নিয়ে বিদেশিদের দারস্থ হয়, তারা দেশবিরোধী কাজ করেন বলে আমরা মনে করি।’