ভারত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম চমক দেখালো আফগানিস্তান। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানের বড় ব্যবধানে হারাল আফগানরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সাক্ষাতে পেল বড় সাফল্য। নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার বড় কোনো দলের বিপক্ষে জয় পেল আফগানিস্তান। এর আগে ১৭ ম্যাচে তাদের একমাত্র জয়টি ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ৫ বলে ২৮৪ রান তুলে অলআউট হয় আফগানিস্তান। তাদের দেওয়া ২৮৫ রানের টার্গেট তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ইংল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন ফজল হক ফারুকি। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। দলীয় ৩৩ রানে ফেরেন জো রুট। ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন।
দুই উইকেট পতনের পর হ্যারি ব্রুককে সঙ্গে নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন আরেক ওপেনার ডেভিড মালান। তবে উইকেটে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি তিনিও। দলীয় ৬৮ রানে মোহাম্মদ নবীর বলে এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে সাঝঘরে পথে ফেরেন তিনি। ৩৯ বলে ৩২ রান করেন তিনি।
মালান চলে যাওয়া ইংল্যান্ড শিবিরে আরও চাপ বাড়তে থাকলে চতুর্থ উইকেটে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারে কাঁধে পরে দায়িত্ব। ২২ গজে আজ ব্যর্থ হন তিনি। দলীয় ৯১ রানে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ইংলিশ এই অধিনায়ক দুই অংকের ঘরই পার করতে পারেনি আজ। এরপর পাঁচে ব্যাট করতে নামা লিয়াম লিভিংস্টোনও বেশিক্ষণ পিচে থিতু হতে পারেননি। রশিদ খানে বলে এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে প্যালভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন তিনি।
লিভিংস্টোন করেন ১০ রান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেটে হারাতে থাকা ইংলিশ ব্যাটাররা আর ম্যাচের হাল ধরতে পারেননি। শেষ দিকে আদিল রশিদের ক্যামিও শুধু হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানে অলাউট হয়ে যায় জস বাটলারের দল। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন হ্যারি ব্রুক। ৬১ বল খেলে সাতটি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে তিনি সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন তিনি। এছাড়া আদিল রশিদ ২০ ও মার্ক উডের ১৮ রান ছিল উল্লেখযোগ্য।
আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন। এছাড়া মোহাম্মদ নবী দুটি উইকেট নেন।
এর আগে, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ৫ বলে ২৮৪ রান তুলে অলআউট হয় আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এদিন অভিষিক্ত ইকরাম ৬৬ বলে ৫৮ রান করেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪২ রানে ৩ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার লেগ স্পিনার আদিল রশিদ।
ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় আফগানিস্তান। দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানুল্লাহ গুরবাজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে নতুন বলে পাত্তাই পায়নি মার্ক উড-রিস টপলিদের মতো ইংলিশ পেসাররা। বিশেষ করে ব্যাট হাতে রীতিমতো ঝড় তোলেন গুরবাজ। ব্যক্তিগত ফিফটি পেতে মাত্র ৩৩ বল খরচ করেন।
গুরবাজকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। তবে তিনি বেশি দূর যেতে পারেননি। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আদিল রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি এই ওপেনার। বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটের হাতে। এতে ১১৬ রানের দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায়। ৪৮ বলে ধীরগতির ২৮ রান করে ফেরেন ইব্রাহিম।
এরপর সেঞ্চুরির পথে থাকা গুরবাজকে সঙ্গ দিতে তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি রহমত শাহও। আদিল রশিদকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন এই টপ-অর্ডার ব্যাটার। উইকেটের পেছনে বাটলার স্টাম্প ভাঙতে খুব একটা সময় নেননি। এতে মাত্র ৩ রান এসেছে রহমতের ব্যাট থেকে।
রহমত ফেরার পরের বলে ফিরেছেন গুরবাজও। এই ওপেনার খানিকটা আক্ষেপ করতেই পারেন-শুরু থেকে ছন্দে ছিলেন, সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন। তবে ভাগ্য তার সঙ্গে ছিল না! কাটা পড়েছেন রান-আউটে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। এরপর হাশমতউল্লাহ শাহিদি-আজমতউল্লাহ ওমরজাইরা ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
মিডল-অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দুর্দান্ত ছিলেন ইকরাম আলিখীল। তিনি ব্যক্তিগত ফিফটির দেখা পেয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৮ রান। লোয়ার মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন রশিদ খান-মুজিব উর রহমানরা। রশিদের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ রান, মুজিব ফেরেন ২৮ রান করে। সবমিলিয়ে ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যই দাঁড় করায় আফগানরা।