রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান।

জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি বিক্রেতারা অংশ নেন।

এতে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ অয়েল মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ পাইকারি ভৌজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৪৬টি পণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না- তা তদারকি করবেন কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর, সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারদর সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা ও সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করবেন এই কমিটির সদস্যরা।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, সারা বিশ্বে উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান। বাংলাদেশে এর উল্টো। বাংলাদেশেও এমন সংস্কৃতি তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী। আমরা ব্যবসা করব, লাভ করব, এটাই স্বাভাবিক। সরকারের পাশে থেকে আমরা চাই সাধারণ মানুষ যেন পণ্যটা ন্যায্য দামে পায়। কিন্তু আমাদেরকে ঢালাওভাবে অনেক কথা শুনতে হয়। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর জন্য আমরা সবাই ব্লেম শুনব, সেটা হতে পারে না। আমি বলব না যে আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমস্যা নাই। সমস্যা থাকতেই পারে। আমি তাদের দায়িত্ব নেব না। আমরা তাদের শাস্তি দিতে চাই।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের প্রেসিডেন্ট। আমি কোনো খারাপ, অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রেসিডেন্ট হতে চাই না। আমি এই কথাটা সব সময় বলি। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিনই বলব। অসাধু কিছু ব্যবসায়ী থাকতে পারে। আমি তাদের প্রেসিডেন্ট না। আপনারা (সাংবাদিক) তাদের চিহ্নিত করে দেন, আমরা ওই বিষয়ে কাজ করব।’

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, কোভিড ও রাশিয়া ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ অন্য পণ্যের দাম এবং জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেহেতু পণ্যের দাম ও শিপিং খরচ বেড়েছে, তাই শুল্ক ও করহার কমালেও সরকারের রাজস্বের ঘাটতি কমবে না, বরং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যাবে। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের প্রাপ্ত ঋণসীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণ সীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানো দরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি না করার আহ্বান জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, হারুন অর রশীদ, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার প্রমুখ।