সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ আহত হয় বলে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার (২১ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক আলোচনা সভায় নিরাপদ সড়ক চাই-এর (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এসব তথ্য তুলে দরেন।

ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে জাতিসংঘ সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের বিষয়ে এ সভা হয়। এসময় তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার অন্যতম প্রধান কারণ। মানসম্মত হেলমেট পরার মাধ্যমে বাঁচে জীবন। জীবন রক্ষায় হেলমেট পরতে সচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব কার— বলে প্রশ্ন রাখেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

প্রশ্ন উত্তর পর্বে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বর্তমানে বাজারে মানহীন হেলমেট রয়েছে। মানসম্মতও হেলমেট রয়েছে। কিন্তু এসব হেলমেট কতোদিন ব্যবহার করা যাবে, কতদিন পর এর (লাইফটাইম) ব্যবহার করা যাবে না তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ নিয়ে একটা নির্দেশনা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সভায় ২টি বিষয় নিয়ে অনেকেই বলেছেন। আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। আইন প্রয়োগোর দিক থেকে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা করে যাচ্ছেন কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব কার?

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক মো আবদুস সাত্তার বলেন, বাজারে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ হাজার টাকার মধ্যে মানসম্মত হেলমেট পাওয়া যায়। যে যার পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। তবে এবস হেলমেটেরও একটা লাইফ টাইম থাকা প্রয়োজন। কতোদিন পর আর এ হেলমেট ব্যবহার করা যাবে না, তা নির্ধারণ করা দরকার। বাজারে মানহীন বহু হেলমেট রয়েছে তাও খেয়াল রাখতে হবে।

ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইনের চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের সচেতনতায় কাজ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতন করা গেলেই দুর্ঘটনা কমে আসবে।

সভায় আলোচকরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ আহত হয়। আহতদের অনেকে স্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। পৃথিবীর মোট যানবাহনের প্রায় ৬০ ভাগ রয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, আর দুর্ঘটনার ৯৩ শতাংশই ঘটে এসব দেশে। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াদের ৪ জনের ১ জনই পথচারী বা সাইকেল আরোহী।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. আতিকুল ইসলাম, বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।

সপ্তমবারের মতো এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ। এ বছর এই উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ১৫ থেকে ২১ মে সময়কালের সপ্তাহটিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এই ক্যাম্পেইনে হ্যাশট্যাগ রিথিঙ্ক মবিলিটি (#Rethink Mobility), হ্যাশট্যাগ স্ট্রিটস ফর লাইফ (#StreetsforLife), হ্যাশট্যাগ রোড সেফটি (#RoadSafety) ব্যবহার করা হচ্ছে।