আজ শনিবার ২২শে শ্রাবণ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনন্য সাধক পুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকী। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। এই বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবী-ভক্তদের কাছে একটি শূন্য দিন। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এদিন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সব কিছুর সঙ্গেই একটু একটু করে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কিছুই সম্ভব না। বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ৎুবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা ও দর্শনে।
ভারতের কলকাতার জোঢ়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেওয়া এ জমিদারপুত্র বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই সফল বিচরণ করেছেন। প্রেম, প্রকৃতি আর জীবনের প্রতি বাঙালির বোধকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিকতার পরশে বর্ণময় ও বহুমাত্রিকতায় ভরে দিয়ে গেছেন। তার লেখা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ সর্বকালের সেরা সঙ্গীত হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশ ও ভারত অর্থাৎ দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।
অন্যান্য বছরের মতো সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন, আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হলেও শিলাইদহের কুঠিবাড়িসহ কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখা আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২৫ বৈশাখ জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে যেখানে পা ফেলার জায়গা না থাকলেও সেখানে কবির মহাপ্রয়াণ দিবসে রবীন্দ্র প্রেমীদের সংখ্যা একটু কম থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ লিখে ১৯১৩ সালে তিনি জয় করেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। যার অধিকাংশই তিনি লিখেছিলেন এই শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে বসে।
ফরিদপুর থেকে এই কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসা আসিফ, রকিব ও লুনা নামের দর্শনার্থীরা জানায়, এই কুঠিবাড়িতে এসে অনেক ভালো লাগছে। তবে এখানে জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান যেভাবে পালন করা হয়ে থাকে সেভাবে কবির প্রয়াণ দিবসেও সরকারি প্রর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানান তারা।
কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত প্রতিভা। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে নিজ প্রতিভার আলোয় বিশ্বমানে উন্নীত করেছিলেন। তার সৃষ্টিকর্ম শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলেই নয়, সারাবিশ্বে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তার অবদানে পরিপুষ্ট হয়ে ওঠেনি। তার সাহিত্যভুবনে দেশমাতৃকা ও মানুষের জীবনই প্রধান উপজীব্য। প্রকৃতি ও মানব প্রেমে সিক্ত তার কবিতা ও গান। তার রচিত গান আমাদের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পাওয়ায় আমরা গর্বিত।’
কবির এই প্রয়ান দিবসে আমরা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সন্ধ্যায় আলোচনা ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের আয়োজন করেছি।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মখলেছুর রহমান বলেন, কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে বড় ধরনের কোন অনুষ্ঠান না হলেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠান করবো।
এদিকে, শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস পালনে উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা রবীন্দ্র ভক্তদের।