বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলেন মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (১৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যংকিং খাতের পুনরুদ্ধারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। এ খাতের সুরক্ষায় সরকারের শক্ত ও স্বচ্ছ নীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে। আসলে কোনও আয়ই হয়নি, আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাধারণ মানুষ আমানত নিয়ে নিশ্চয়তা পাঁচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা বেশি সুদ দিয়েও ঋণ পাচ্ছে না। টাকা বাহিরে চলে গেলে তো সঞ্চয় থাকবে না। রাজস্ব খাতে সরকারের ব্যাপক ব্যর্থতা। সরকারের সামর্থ্য সরকার নিজেই হারিয়ে ফেলেছে। ধার করার সক্ষমতাও নেই। ব্যাংক খাতে টাকা নেই। পাশাপাশি ডলারও নেই।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাতের তথ্য সবচেয়ে বেশি লুকানো হচ্ছে। তবে এই খাতের তথ্য বেশি প্রকাশ্যে রাখা উচিত ছিল।

ব্যাংক খাত না পারছে সরকারকে কিছু দিতে, আর না পারছে নিজেকে রক্ষা করতে। অর্থাৎ আমানতকারীদের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

দেশের ব্যাংক খাত একেবারে শুরু থেকে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছে। কখনো ব্যাংক খাত পুরো সফলতার মধ্যে ছিলো না বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, আর্থিক খাত উর্ধ্বমূখী করার ব্যাপারে আমরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছি। ভারতের স্টক মার্কেট কোথায়, আর আমরা কোথায়?
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত কয়েকবছর ধরেই অস্বস্তিতে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যেখানে টাকার সঞ্চয় হচ্ছে না। বড় একটা অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। এই চাপ আর ভার বহনের সক্ষমতা ব্যাংকিং খাতের নেই। এর ফলে বিনিয়োগ সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। আসছে না নতুন বিনিয়োগ, হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে খুব মন্দা চলছে। সংকট নিরসনে আশার কোনো আলো নেই। আগে বলা হলো, নির্বাচনের পর নতুন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন শেষে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় নি। আবার নতুন বাজেটেও তেমন উদ্যোগ নাই। মনে হচ্ছে, সরকার সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখছে। যদিও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তবে সেগুলো আবার সংস্কারের জন্য যথাযথ নয়। যেমন, ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ আর্থিক খাতের সংস্কারের সঠিক পদ্ধতি মেনে হয়নি।

দেশের কর রাজস্ব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে দেশের কর রাজস্ব আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। এই খাতে যথেষ্ট হয়রানি রয়েছে। অথচ রাজস্ব আয় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। সেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে কর আদায় বাড়াতে হবে। পাবলিক সার্ভিস বাড়াতে পারলে,  সেবার গুণগত মানে মানুষ সন্তুষ্ট হলে তখন আর কর প্রদানে মানুষের আপত্তি থাকবে না।